প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু:
বাংলাদেশী বৌদ্ধদের তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু, উপসংঘরাজ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকে ভুষিত, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ, ধর্মীয় বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও অনুবাদক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান সাংঘিক ব্যাক্তিত্ব, বাংলাদেশী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার প্রাক্তন সভাপতি, পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র আজ ৯০তম জন্মদিন। ১৯৩০ সালের ১০ জুন আজকের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৩০ সালের ১০ জুন কক্সবাজার জেলাধীন রামু উপজেলার ফতেখারকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি প্রব্রজ্যা ধর্মে দীক্ষিত হয়ে সত্যপ্রিয় নাম ধারণ করেন। একই বছরে তিনি ভিক্ষু ধর্মে দীক্ষিত হন। এরপর ১৯৫৪ সালে ধর্মীয় উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি মায়ানমার গমণ করেন। সেখানে তিনি একটানা দশ বছর লেখাপড়া, গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সাধনায় মনোনিবেশ করেন।
পরবর্তীতে তিনি ১৯৬৪ সালে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। সেই থেকে তিনি সারাজীবন রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে ছিলেন।
২০০৬ সালে বাংলাদেশী বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংগঠন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সত্যপ্রিয় মহাথের বৌদ্ধধর্ম বিষয়ক অনেক গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা ও অনুবাদের জন্য বিজ্ঞ মহলে প্রশংসিত।
সর্বশেষ তিনি ত্রিপিটকের অভিধর্ম পিটকের অন্তর্গত ‘চুলবর্গ’ গ্রন্থ পালি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। এই গ্রন্থের তিনিই একমাত্র এবং প্রথম বাংলা অনুবাদক। বর্তমান গ্রন্থটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৌদ্ধধর্মীয় উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
বৌদ্ধধর্ম প্রচার ও প্রসারে অনন্য অবদানের জন্য এবং বৌদ্ধধর্মে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য ২০০৩ সালে তিনি মায়ানমার থেকে ‘অগ্গমহাসদ্ধম্মজোতিকাধজ’ উপাধিতে বিভূষিত হন।
সর্বশেষ তিনি সমাজসেবায় অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি সরূপ ২০১৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকে ভুষিত হন।
এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের ২০১৯ সালের দিবাগত রাত ৩ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাপ্রয়াণ করেন।
৯ অক্টোবর তাঁর শবদেহ রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারে যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ পাঁচ মাসের ব্যবধানে চলতি বছরের ২৭, ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি এই তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়।