লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
আমাদের দেশে শতকরা ৬০ ভাগ নারী জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে একবার হলেও ইউ.টি.আই (মূত্র তন্ত্রের একটি সংক্রামক রোগ) এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
নারীদের বিশেষ করে গর্ভবতীদের মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
কারণ
– কিছু শারীরিক ব্যপার। যেমন তাদের মূত্রনালীর দৈর্ঘ্য কম। মূত্রনালী মলদ্বারের কাছাকাছি থাকে।
– হরমোন জনীত সমস্যায় মূত্রনালীর প্রশস্ততা কমে যাওয়া।
– পেলভিক মেঝের মাংশপেশি শিথিল হয়ে যাওয়া।
– প্রসাব মূত্রথলীতে বেশি সময় ধরে থাকে। যা জীবাণু জন্মাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে মহিলারা ইউ.টি.আই’তে আক্রান্ত হন।
মূত্রনালীর সংক্রমণ বলতে বোঝায়
মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই হল মূত্রতন্ত্রের একটি সংক্রামক প্রদাহ। তরল বর্জ্য পদার্থ বের হওয়ার জন্য আমাদের দেহে যে পদ্ধতি রয়েছে তাকে মূত্রতন্ত্র বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট বলে।
যদি কোনো কারণে জীবাণু এই তন্ত্রে আঘাত হানে তাহলেই মূত্রতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটে আর এই অবস্থাকেই বলা হয় মূত্রতন্ত্রের সংক্রামক রোগ বা ইউটিআই।
ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক বা ভাইরাস এরা সবাই এই রোগের জন্য দায়ী থাকলেও ব্যাক্টেরিয়াই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর জন্য দায়ী।
উপসর্গ
• প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া। • ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা। • মূত্রে দুর্গন্ধ। • প্রস্রাবের প্রচণ্ড চাপ অনুভব। • প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া ও অসহ্য অনুভূতি। • তলপেটে ব্যথা অনুভব। • ঘন ফেনার মতো অথবা দুর্গন্ধ যুক্ত প্রস্রাব। • কাঁপুনিসহ অথবা কাঁপুনি ছাড়া জ্বর। • বমিবমিভাব ও বমি হওয়া। • কোমরের পাশের দিকে অথবা পেছনের মাঝামাঝি অংশে ব্যথা। • প্রস্রাবের চাপে রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া। • অনেক সময় ধোয়াচ্ছন্ন বা রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব ত্যগ হতে পারে।
কারণ
• পানি কম খেলে। • ঘামে ভেজা অপরিষ্কার অন্তর্বাস পরে থাকলে। • নোংরা বাথরুম ব্যবহার করলে। • শরীরে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। • যারা রক্তশূন্যতায় ভোগেন। • যাদের ডায়াবেটিস আছে। • প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হলে।
• ষাটের বেশি বয়স হলে। • মূত্রথলিতে পাথর থাকলে। • বিভিন্ন হরমোনজনীত পরিবর্তন। • গর্ভাবস্থায় শারীরবৃত্তীয় কারণে।
পরামর্শ
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস বা অন্তত ৩ লিটার পানি পান করুন।
পানির পাশাপাশি তরল খাবার যেমন- ফলের জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি বেশি বেশি পান করুন।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে।
পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে সেটি পরিষ্কার কিনা। হাই কমোড ব্যবহারের সময় সেটা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। যদি সম্ভব না হয় তাহলে কমোডের ওপর টিস্যু পেপার বিছিয়ে নেবেন এতে করে জীবাণু সহজে শরীরের সংস্পর্শে আসতে পারবে না।
একই কাপড় না ধুয়ে বেশিদিন পরিধান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রস্রাবের পর যৌনাঙ্গ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করতে সবসময় সামনের দিক থেকে পেছনে যাবেন, পেছন থেকে সামনে নয়। তা-না হলে মল দ্বার থেকে জীবাণু সামনে চলে এসে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
সহবাসের পরে অবশ্যই বাথরুমে যান। ব্লাডার খালি করে দেওয়াই ভালো। কেননা ইন্টারকোর্সের সময় ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। সেখান থেকে বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
যখন প্রয়োজন অনুভব করবেন তখনই মূত্র ত্যগের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
আঁটসাঁট কাপড় পরিহার করা।
সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করুন। এবং প্রতিদিন অন্তর্বাস পরিবর্তন করতে হবে।
শক্তিশালী সাবান, পরিচ্ছন্নতার স্প্রে, পাউডার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। এবং এ ধরনের কোন সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তার অথবা টেলিমেডিসিনের সাহায্য নিন।
ব্যক্তিজীবনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইরোগ সম্পূর্ণ ব্যক্তি জীবনের জীবনযাপনের ওপর নির্ভরশীল। এটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয় না। এতে প্রথমদিকে তেমন কোনো সমস্যা নাহলেও বারবার হতেই থাকলে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সময় থাকতে নিজের যত্নে সচেতন হন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ