অনলাইন ডেস্কঃ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত-মৃত্যুতে রেকর্ড হয়েছে। ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর এক দিনে এতসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩ হাজার ৪৭১ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা দু’দিন যথাক্রমে ৩ হাজার ১৯০ জন ও ৩ হাজার ১৮৭ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এ নিয়ে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৫২৩ জনে পৌঁছাল। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৬ জন এই ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন। গত ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর পর এক দিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। এর আগে গত মঙ্গলবার করোনায় ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ৯৫ জনে পৌঁছাল। এর বিপরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫০২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত মোট ১৭ হাজার ২৪৯ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি, ইমপেরিয়াল হাসপাতাল এবং ঢাকার ড. লালপ্যাথ ল্যাব বাংলাদেশ নতুন করে যুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে নতুন তিনটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিসহ মোট ৫৯টি ল্যাবরেটরিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ৯৫০টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৫ হাজার ৯৯০টি পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো চার লাখ ৭৩ হাজার ৩২২টি। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ, শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৪ শতাংশ।
মৃতদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ এবং ৯ নারী। তাদের ৩২ জন হাসপাতালে ও ১৪ জন বাড়িতে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ১৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১১ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন সিলেট বিভাগের, দু’জন রাজশাহী বিভাগের, তিনজন বরিশাল বিভাগের, পাঁচজন রংপুর বিভাগের, একজন খুলনা বিভাগের এবং দু’জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা। এই ৪৬ জনের মধ্যে একজন রোগীর বয়স ১০০ বছরের বেশি। এ ছাড়া একজনের বয়স ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে, সাতজনের বয়স ৭০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ১৫ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, তিনজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ছয়জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, একজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছে।
আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের চিত্র তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে আরও ৪৩৬ জনকে। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৭৩ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১৮৮ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৬১ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ৯ হাজার ১২ জন। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে দুই হাজার ৮৮৮ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে তিন লাখ ১৫ হাজার ২৩২ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন দুই হাজার ৩৪ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড়া পেয়েছেন দুই লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৯ হাজার ৮৫৩ জন।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছ ১০৬টি। একই সঙ্গে দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেওয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
করোনার ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সবাইকে অনুরোধ জানান অতিরিক্ত মহাপরিচালক। করোনা থেকে সুরক্ষার পরামর্শ তুলে ধরে তিনি বলেন, শিশুরা অনেক দিন ধরে ঘরে বন্দি। তাদের বিষয়ে যত্নশীল হোন। সবার মানসিক স্বাস্থ্য উজ্জীবিত রাখতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
সূত্রঃ সমকাল