অনলাইন ডেস্কঃ
এলাকাভিত্তিক কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বিবেচনায় নিয়ে যখন যে অঞ্চলে প্রয়োজন, তখন সে অঞ্চলকে ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার।
কোনো অঞ্চলকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হলে তা ২১ দিনের জন্য কার্যকর হবে। পরিস্থিতির উন্নতির ওপর ভিত্তি করে পরে ওই এলাকাকে ইয়েলো বা গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
রেড জোন ঘোষণা নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ এড়াতে মঙ্গলবার সরকারের এক তথ্যবিরবণীতে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
সেখানে বলা হয়, “যেখানে যখন প্রয়োজন তখন সেখানে রেড জোন ঘোষণা করা হবে। কাজেই রেড জোন ঘোষণা বা রেড জোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া।
“স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন প্রয়োজন তা করা হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করবে। এ বিষয়ে সকলের বিভ্রান্তি নিরসন হওয়া প্রয়োজন।”
দুই মাসের বেশি সময় সারাদেশে লকডাউন শেষে ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলেও প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এলাকা ধরে ধরে লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সে অনুযায়ী গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদী জেলার কিছু এলাকা এবং ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে ‘পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। ঢাকার ওয়ারীতেও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে এলাকা চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির শনিবারের সভায় দেশের ‘রেড জোন’গুলো চিহ্নিত করে। তাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকা সর্বোচ্চ ঝুঁকির ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
এদিকে সংবাদমাধ্যমে আসা রেড জোনের তালিকায় নিজের এলাকার নাম দেখে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। এর মধ্যে রেড জোনগুলো মঙ্গলবার থেকে অবরুদ্ধ হচ্ছে বলে গুঞ্জন শুরু হলে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোর কোন কোন অংশ অবরুদ্ধ হচ্ছে তা জানতে অনেকে থানায়ও ফোন করেন।
নির্দিষ্ট কোনো তারিখের কথা না জানিয়ে সরকার বলেছে, কেন্দ্রীয় কারিগরি কমিটি অব্যাহতভাবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং ‘বাস্তবমুখী সংজ্ঞা’ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
“সে অনুযায়ী ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংজ্ঞা অনুযায়ী যেখানে যখন প্রয়োজন তখন রেড জোন ঘোষণা করা হবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারের অনুমোদন নিয়ে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন অনুযায়ী কোনো এলাকাকে লাল, হলুদ বা সবুজ জোন হিসেবে ঘোষণা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জেলার সিভিল সার্জনকে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তা নিয়ে তিনি জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন।
সংক্রমণের ঝুঁকি যেখানে বেশি, সেই এলাকাই হবে রেড জোন। জেলা, উপজেলা, এলাকা, মহল্লা বা বাড়ি ধরে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউনের মত বিধিনিষেধে জারি করা হবে।
লাল অঞ্চলে জীবনযাত্রা ‘কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ’ করা যাবে। অফিস-কারখানা সব থাকবে বন্ধ। যানবাহন ও সাধারণের চলাচলে থাকবে কড়াকড়ি। বাজার বা মার্কেটও থাকবে বন্ধ। এসব বিধিনিষেধ চলবে অন্তত তিন সপ্তাহ।
তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, জোন সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন অংশে কার্যকর হবে এবং এর পরিধি কী হবে তা স্থানীয় কর্তৃপক্ষক ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্থানীয় কমিটিগুলোকে নির্ধারণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত কৌশল বা গাইডলাইন তৈরি করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে বিতরণ করেছে।
দেশের বিভিন্ন জেলা ও সিটি করপোরেশন এ সংক্রান্ত কৌশল ও গাইডলাইন অনুসারে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে জানিয়ে সরকারি ভাষ্যে বলা হয়েছে, “সে অনুযায়ী তারা প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নপূর্বক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতামত অনুযায়ী জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে।”
সূত্র: বিডিনিউজ