অনলাইন ডেস্কঃ
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ে জমা দেওয়া যাবে বলে আশা করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রধান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
রোববার বিকালে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে গণশুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
সকাল থেকে এখানে প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনাস্থলে থাকা নয় জনের কাছ থেকে শুনানি গ্রহণ করা হয়।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হন।
ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চার সদস্যের কমিটি গঠন করে। সেখানে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করা হয়।
কমিটির অপর সদস্যরা হলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) একজন প্রতিনিধি এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির একজন প্রতিনিধি।
ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলি গত ১২ অগাস্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে রোববার [১৬ অগাস্ট] গণশুনানির কথা জানান।
মিজানুর রহমান বলেন, গণশুনানিতে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঘটনার কোনো কিছু যাতে বাদ না পড়ে সেজন্য ঘটনাস্থলের পাশে সরকারি স্থাপনাটি (শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়) গণশুনানির স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
“এখানে (গণশুনানিতে) যারা একেবারেই প্রত্যক্ষদর্শী, যারা দেখেছে, ঘটনাস্থলে ছিল তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।”
তদন্তের কার্যক্রম প্রায় শেষ দিকে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, সরকার আমাদেরকে (তদন্ত কমিটি) ২৩ তারিখ পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে, এর মধ্যে আমরা আমাদের রিপোর্ট প্রস্তুত করতে পারব এবং সরকারকে জমা দিতে পারব।”
তদন্তে এ পর্যন্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট নানা পর্যায়ের ৬০ জন ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান মিজানুর রহমান।
তদন্ত কমিটির এ প্রধান বলেন, গত ৩ অগাস্ট তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করেছে। এ সময় কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সরকার ৭ কর্মদিবস নির্ধারণ করে দেয়। পরবর্তীতে সেটির মেয়াদ আরও আরো ৭ কর্মদিবস বাড়ানো হয়।
“তদন্ত কাজ শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমাদের যেখানে যেখানে যাওয়ার দরকার আমরা প্রত্যেকটা জায়গায় গিয়েছি। আমরা মানচিত্র তৈরি করেছি। ঘটনার যেখান থেকে সূত্রপাত সেই নুনিয়া পাহাড় থেকে শুরু করে আমরা ঘটনাস্থল তিনবার পরিদর্শন করেছি। আমরা এসব জায়গাগুলো রেকি করেছি।”
টেকনাফ থানার পুলিশ, ফাঁড়ির পুলিশ, তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্য, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালক, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক, সুরতহাল প্রস্তুতকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ৬০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে মিজানুর জানান।
এছাড়া বিভিন্ন সংস্থাকেও তদন্ত কমিটি চিঠি ইস্যু করেছে জানিয়ে তদন্ত কমিটি প্রধান বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে ঘটনা সংক্রান্ত যদি কোনো ধরনের ডকুমেন্ট থাকে তা কমিটির কাছে জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া গণশুনানি শেষ হয় বিকাল পৌনে ৫টায়।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহান আলি বলেন, শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের ১১ জন ব্যক্তি নিবন্ধন করলেও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে নয়জনের। এদের মধ্যে দুইজন স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দাও রয়েছেন।
গণশুনানিকে কেন্দ্র করে শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ের আশপাশে শত শত উৎসুক জনতার ভিড় জমতে দেখা গেছে। তবে তাদের গণশুনানি স্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আশাপাশে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের কড়া নজরদারি দেখা গেছে।
গণশুনানীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ছাড়াও কমিটির সদস্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের প্রতিনিধি জাকির হোসেন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদসহ প্রশাসনের নানা স্তরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ