ক্রীড়া ডেস্কঃ
নবম উইকেটে টম কারান আর আদিল রশিদের অসাধারণ লড়াইয়ের পরও পুঁজি খুব একটা বড় হয়নি। চ্যালেঞ্জিং উইকেটে সাবলীল ব্যাটিংয়ে অ্যারন ফিঞ্চ ও মার্নাস লাবুশেন অনেকটাই মুঠোয় নিয়ে এসেছিলেন ম্যাচ। তাদের শতরানের জুটি ভেঙে ঘুরে দাঁড়ানোর চমৎকার এক গল্প লিখল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা টানল ওয়েন মর্গ্যানের দল।
ম্যানচেস্টারে রোববার ২৪ রানে জিতেছে স্বাগতিকরা। ২৩১ রান তাড়ায় ২০৭ রানে থমকে গেছে অ্যারন ফিঞ্চের দল।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। ফিঞ্চ ও লাবুশেনের দৃঢ়তায় এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে নেওয়ার আশা জাগিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু জফ্রা আর্চার-ক্রিস ওকস-স্যাম কারানদের দারুণ বোলিংয়ে ৮ উইকেট হাতে নিয়েও ৮৮ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি তারা। এই তিন পেসার নেন তিনটি করে উইকেট।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। রানের খাতা খোলার আগেই মিচেল স্টার্কের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান জনি বেয়ারস্টো। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা জেসন রয় ফিরেন রান আউট হয়ে।
২৯ রানে দুই ওপেনারকে হারানো ইংল্যান্ড প্রতিরোধ গড়ে জো রুট ও মর্গ্যানের ব্যাটে। কঠিন সময়ের পর জমে উঠেছিল তাদের জুটি। বাড়তে শুরু করেছিল রানের গতি।
আক্রমণে এসেই ৬১ রানের জুটি ভাঙেন অ্যাডাম জাম্পা। ৩৯ রান করে স্লিপে ক্যাচ দেন রুট। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ভোগানো লেগ স্পিনার পরে বিদায় করেন ৫ চারে ৪২ রান করা মর্গ্যানকে। জ্যাম্পার দুই উইকেটের মাঝে জস বাটলারকে ফেরান প্যাট কামিন্স।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান স্যাম বিলিংস যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। দ্রুত ফিরেন স্যাম কারান। থিতু হয়ে বিদায় নেন ক্রিস ওকসও। রুটের বিদায় দিয়ে যে ধস নামে তাতে ৫৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দুইশর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে ইংল্যান্ড।
১৪৯ রানে ৮ উইকেট হারানো স্বাগতিকদের লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন টম কারান ও রশিদ। পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন দলে ফেরা টম, শেষের দিকে চড়াও হন রশিদও। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড পায় ইনিংসে সেরা জুটি, ৫৬ বলে ৭৬ রান।
৫ চারে ৩৭ রান করে শেষ ওভারে ফিরে যান টম। তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন রশিদ।
চার হাঁকিয়ে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ করা আর্চার আঘাত হানেন শুরুতেই। দারুণ এক ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড করে ফেরান ডেভিড ওয়ার্নারকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এনিয়ে সাতবার আর্চারের বলে আউট হলেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
আর্চারের নিখুঁত বাউন্সার ঠিকমতো খেলতে না পেরে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মার্কাস স্টয়নিস।
ফিঞ্চ ও লাবুশেনের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় অস্ট্রেলিয়া। ওকস-আর্চার আক্রমণ থেকে সরে যাওয়ার পর রানের গতি বাড়ান দুই ব্যাটসম্যান। তাদের শতরানের জুটিতে দৃঢ় ভিতের উপর দাঁড়ায় সফরকারীরা।
লেগ স্পিনার রশিদ ছিলেন খরুচে। দুই ভাই টম ও স্যাম কারানও পাচ্ছিলেন না জুটি ভাঙার পথ। নতুন বলের দুই বোলার আক্রমণে ফিরতেই পাল্টে যায় চিত্র। ওকস-আর্চারের আঘাতে ২ উইকেটে ১৪৪ রান থেকে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর হয়ে যান ১৪৭/৬।
ওকসের বলে এলবিডব্লিউর সফল রিভিউ নিয়ে লাবুশেনকে ফিরিয়ে ১০৭ রানের জুটি ভাঙে ইংল্যান্ড। আর্চারের নিচু হয়ে যাওয়া এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান মিচেল মার্শ।
পরপর দুই ওভারে বিপজ্জনক ফিঞ্চ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ফিরিয়ে ম্যাচ ইংল্যান্ডের দিকে ঘুরিয়ে দেন ওকস। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের ১০৫ বলে খেলা ৭৩ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস গড়া ৮ চার ও এক ছক্কায়।
একটু ঝুঁকি নিয়ে আগেভাগেই আর্চার-ওকসের কোটা শেষ করিয়ে দেন ইংলিশ অধিনায়ক। দলের প্রয়োজনের সময় দারুণভাবে এগিয়ে আসেন স্যাম কারান। পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন কামিন্স ও স্টার্ককে।
অ্যালেক্স কেয়ারি ছিলেন বলে তখনও আশা বেঁচে ছিল অস্ট্রেলিয়ার। তাকে ফিরিয়েই সফরকারীদের ইনিংসের ইতি টানেন রশিদ।
আগামী বুধবার একই ভেন্যুতে হবে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৩১/৯ (রয় ২১, বেয়ারস্টো ০, রুট ৩৯, মর্গ্যান ৪২, বাটলার ৩, বিলিংস ৮, ওকস ২৬, স্যাম কারান ১, টম কারান ৩৭, রশিদ ৩৫*, আর্চার ৬*; স্টার্ক ১০-১-৩৮-২, হেইজেলউড ১০-২-২৭-১, কামিন্স ১০-৩-৫৬-১, মার্শ ৮-১-৪৯-১, স্টয়নিস ২-০-২০-০, জ্যাম্পা ১০-০-৩৬-৩)
অস্ট্রেলিয়া: ৪৮.৩ ওভারে ২০৭ (ওয়ার্নার ৬, ফিঞ্চ ৭৩, স্টয়নিস ৯, লাবুশেন ৪৮, মার্শ ১, কেয়ারি ৩৬, ম্যাক্সওয়েল ১, কামিন্স ১১, স্টার্ক ০, জ্যাম্পা ২, হেইজেলউড ৮*; ওকস ১০-১-৩২-৩, আর্চার ১০-২-৩৪-৩, টম কারান ১০-০-২৮-০, রশিদ ৯.৪-০-৬৮-১, স্যাম কারান ৯-০-৩৫-৩)
ফল: ইংল্যান্ড ২৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জফ্রা আর্চার
সূত্রঃ বিডিনিউজ