লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
পানীয় কিংবা রেস্তোরাঁয় খাবার ভাগাভাগি করার মতো সাধারণ অভ্যাসগুলো নিরাপদ নয়।
হাত ধুয়ে খাবার খাও, বাইরের খাবার কম খাও, পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে যেমন- দুগ্ধজাত খাবারের পর লেবু, আচার ইত্যাদি খেতে হয় না ইত্যাদি বিভিন্ন উপদেশ শুনেই মানুষ বেড়ে ওঠে।
এই যে কাজগুলো বারণ করা হয় তার মূল কারণটাই হল এসব করলে বিভিন্ন রোগ ও শারীরিক অস্বস্তির ঝুঁকি বাড়ে। তারপরও আমরা মাঝেমধ্যে করে ফেলি।
বর্তমান মহামারীর সময়ে এই উপদেশগুলো মেলে চলা বিশেষ জরুরি। তবে আরও ভয়ঙ্কর সংবাদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কিছু অভ্যাস, যা আপাত দৃষ্টিতে অনেকে স্বাভাবিক অভ্যাস মনে করেন, সেগুলোই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কয়েকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের এই দাবির ভিত্তি হল নতুন এক গবেষণা, যেখানে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয় থাইল্যান্ডের ২১১ জন করোনাভাইরাস সংক্রামিত রোগী এবং ৮৩৯ জন সুস্থ মানুষকে।
গবেষকদের নিয়ন্ত্রণাধীন এই গবেষণায় দেখা যায়, সামান্য থালা বাসন ভাগাভাগি করার কারণেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে আশঙ্কাজনক হারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজি কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’র সাময়িকী ‘এমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ’য়ে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।
এই গবেষণার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল মাস্ক পরার অভ্যাস করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কতটা কার্যকর তা পরীক্ষা করা। পাশাপাশি বেরিয়ে আসে কিছু নির্দিষ্ট আচরণ বা অভ্যাস যা সুস্থ ব্যক্তির মাঝে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে খুব সবজেই।
বিশেষ করে যারা খাওয়ার বাসন ভাগাভাগি করেন, অর্থাৎ একজনের ব্যবহার করা থালা, গ্লাস, মগ, পানির বোতল আরেকজন ব্যবহার করেন তাদের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি যারা তেমনটা করেন না তাদের তুলনায় বেড়ে যায় ২.৭১ শতাংশ।
নিজের এটো খাবার কিংবা পানীয় ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই একই কথা প্রযোজ্য।
গবেষকরা আরও জানান, একই বাসায় বসবাসকারী এবং একই অফিসে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
এমন স্থানে যদি একজন সংক্রমণের শিকার ব্যক্তি থাকেন তবে তার পরিচর্যার আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভিন্ন ঘরে থাকতে হবে। ভিন্ন শৌচাগার ব্যবহার করতে হবে এবং থালা, বাসন, গ্লাস, মগ, চামচ ইত্যাদিও আলাদা করতে হবে।
রেস্তোরাঁয় কয়েকজন বন্ধু মিলে খাবার খাওয়া, একজনের সিগারেট আরেকজন পান করা ইত্যাদির মাধ্যমেও করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয় মারাত্বক হারে।
থাইল্যান্ডে এমনভাবেই ১৩ জন বন্ধুর মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ পান গবেষকরা।
আর সিডিসি’র ভিন্ন এক গবেষণা দাবি করে, সিগারেট ভাগাভাগি করার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে প্রায় ৬.১২ শতাংশ।
জুলাইতে বেড়াতে গিয়ে এক গ্লাস পানীয় ভাগাভাগি করার মাধ্যমে ১১ জন করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছেন এমন এক গবেষণা প্রকাশ করে থাইল্যান্ড।
সেই খবরে বলা হয়, যারা পানীয়টি ভাগাভাগি করে পান করেছেন তাদের ধারণা ছিল পানীয়টিতে থাকা অ্যালকোহল করোনাভাইরাস ধ্বংস করবে। তবে তেমনটা ঘটেনি।
তবে একই দলের চারজন যারা ওই পানীয় পান করেননি তাদের মধ্যে সংক্রমণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
রেস্তোরাঁগুলো এই কারণেই ‘ওয়ান টাইম ইউজ কাপ’য়ের দিকে ঝুঁকছে দ্রুত।
বিশ্বব্যাপি পরিচিতি কফি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘স্টারবাকস’ সেই মার্চ মাসেই ‘রিইউজেবল কাপ’ ব্যবহার বন্ধ করে। শুধু যে ক্রেতা ঝুঁকিতে আছেন তা নয়, রেস্তোরাঁর কর্মীরাও একটি সংক্রমিত কাপের মাধ্যমে সংক্রমণের শিকার হতে পারেন। যার ফলাফল হতে পারে ভয়ঙ্কর।
আশার কথা হল থালা, বাসন থেকে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা আশঙ্কাজনক হলেও, রান্না করা খাবারের মাধ্যমে সংক্রমণের মাত্রা এখনও অনেক কম।
সূত্রঃ বিডিনিউজ