অনলাইন ডেস্কঃ
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আদর্শ ও নীতি মেনে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে’ কাজ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার ফেনী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার যে আদর্শ, যে নীতি, সেই নীতি মেনে চলতে হবে। আজকে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সকলকে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে হবে।”
ফেনী জেলা পরিষদ উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত খায়রুল বাশার মজুমদারকে এ অনুষ্ঠানে শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে স্থানীয় সরকারগুলোকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
“যে কারণে আমরা আইন করে এই জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ- প্রত্যেকটা স্তর সুবিন্যস্ত করে.. উন্নয়নের গতিটা যেন গ্রাম পর্যায়ে পৌছায়, সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌছায়, একেবারে তৃণমূল মানুষের কাছে যেন উন্নয়নের ছোঁয়া যায়, অর্থাৎ স্বাধীনতার সুফল যেন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পায়, সেই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
ফেনী জেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যানকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অর্জনে কাজ করতে হবে।
“কারণ আওয়ামী লীগ সেই সংগঠন, যে সংগঠন জাতির পিতা গড়ে তুলেছিলেন এবং যে সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছিল এই বাঙালি জাতি।”
শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো অর্জনের পেছনে একটি শক্তির প্রয়োজন, সংগঠনের প্রয়োজন। সেই লক্ষ্য নিয়েই জাতির পিতা আওয়ামী লীগকে ‘তিলে তিলে’ গড়ে তোলেন।
“সেই সংগঠন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করলে তারা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলন ও সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই। জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চাই। সেই কথা মাথায় রেখেই প্রতিটি নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সরকারি কাজে যারা নিয়োজিত, প্রত্যেকেই সেভাবে কাজ করবেন, যেন আমাদের দেশটা উন্নয়নের যেই গতিপথ আমরা সৃষ্টি করেছি, সেটা যেন অব্যাহত থাকে। আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি।”
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ব্যাপকভাবে উদযাপনের পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যে জনসমাগমের কর্মসূচিগুলো আয়োজন করা হয়নি, সে কথা অনুষ্ঠানে বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “সারা বিশ্বে মহামারী দেখা দিলেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য জাতির পিতা যেই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আমি জানি, করোনাভাইরাস যদি না হত, আমরা এতদিনে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম।”
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথা অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা যে খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল, সে কথাও তিনি বলেন।
সে সময় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে দলের হাল ধরার কথা এবং ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে দেশ ও মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই আমি মনে করি, বাংলাদেশের মানুষ এটা ২১ বছর পর উপলব্ধি করেছিল যে, সরকার জনগণের সেবক, সরকার জনগণের সেবা করে, সরকার জনগণের জন্য কাজ করে।”
বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশার কথা আবারও তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্যটা হল, পরবর্তীতে যারাই আসুক ক্ষমতায়, বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে, তাদের জীবনমান যেন উন্নত হয়। আর বাংলাদেশ যেন ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত হয়।”
সূত্রঃ বিডিনিউজ