খালেদ শহীদ:
উখিয়া-টেকনাফে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির আগমনে স্থানীয় বাসিন্দারা আর্থ-সামাজিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে স্থানীয়দের জীবন-জীবিকায় স্থবিরতা নেমে আসে। স্থানীয় জনগোষ্ঠির দারিদ্রতা বেড়ে যাওয়াতে, পারিবারিক সহিংসতাও বেড়ে যায়। স্থানীয়দের জীবন ব্যবস্থায় দারিদ্রতার ঝুঁকি কমাতে, উখিয়া-টেকনাফের সাতটি ইউনিয়নে আইওএম এর অর্থায়নে কাজ করছে ইউনাইটেড পারপাস।
রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজার শহরের ‘হোটেল বীচ ওয়ে’ কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত ‘প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া সংবেদনশীল কর্মশালায়’ এ তথ্য জানানো হয়। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ইউনাইটেড পারপাস এর ইকরা প্রকল্পের আওতায় পৃথকভাবে ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর দু’টি উদ্ভুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশ নেন।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে কর্মশালাটি উদ্ভোধন করেন, বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ক্যাম্প ইনচার্জ শেখ হাফিজুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ইউনাইটেড পারপাসের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ইমার্জেন্সি রেসপন্স ইউনিট প্রধান মাসুদ রানা।
কর্মশালায় বক্তব্য উপস্থাপনে মাসুদ রানা বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয়দের জীবন-জীবিকায় ধ্বস নামে। স্থানীয়দের দারিদ্রতা বেড়ে যাওয়াতে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে। স্থানীয়দের দারিদ্রতার ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজন, তাদের জীবন-জীবিকায় উন্নয়ন করা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। উখিয়া-টেকনাফের সাতটি ইউনিয়নের স্থানীয় জনগোষ্ঠির দারিদ্রতার ঝুঁকি কমাতে ও তাদের আয়-রোজগারের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে ইউনাইটেড পারপাসের ইকরা প্রজেক্ট। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে সরাসরি উপস্থিত থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়। দারিদ্রতায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানীয় মানুষদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আর্থিক পূঁজি ও ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা দেয়া হয়। এরপরও উপকারভোগীদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রমকে নজরদারি করা হয়। তারা যেন সঠিক ভাবে নিজেদের জীবনমান উন্নয়ন ঘটাতে পারে। কক্সবাজারের অন্যান্য উপজেলার স্থানীয় জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নেও ইকরা প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা হবে বলেও তিনি জানান।
ইউনাইটেড পারপাসের ইকরা প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুনীল জীবন চাকমা জানান, উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং, ফালংখালী, রাজাপালং এবং টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, হ্নীলা, সাবরাং ও হোয়াইকং ইউনিয়নে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ইকরা প্রকল্প কাজ শুরু করে। জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নে ৩৭০০ হতদরিদ্র পরিবারকে সহায়তা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ৮৬ ভাগ সুফলভোগীই নারী। প্রকল্পটি সমবায় ভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫৪ টি স্বনির্ভর দল গঠন, ১৭৫০ জনকে ব্যবসায় উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান, ১১২০ জনকে বিভিন্ন ট্রেডের উপর দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও ৭৮৬ জন সুফলভোগীকে ব্যবসা শুরু করার শর্ত সাপেক্ষে ৩৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা নারী, বেকার যুবক-যুবতীরাও অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন।
তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির আগমনে আর্থ সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় জনগোষ্ঠির জন্য এটা একটা ঘাতসহ টেকসই জীবিকা উন্নয়ন কার্যক্রম। সরকারের যুব উন্নয়ন, কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য সহ উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের সেবা প্রদানকারী সংস্থার সাথে ইনপুট ও আউটপুট মার্কেটিং এর বিভিন্ন স্তরে সংযোগ সাধন করা হয়। এর মাধ্যমে সুফলভোগীদের উন্নয়ন টেকসই করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট বরাদ্ধের প্রায় ৮০ ভাগ অর্থ সুফলভোগীদের উন্নয়নের জন্য সরাসরি ব্যয় করা হয়েছে। বাকী ২০ ভাগ অর্থ খরচ হয়েছে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায়।
রবিবার সকালে ‘সমবায় জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে সম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানো’ বিষয়ক কর্মশালায় উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন, সাংবাদিক মুহাম্মদ আলী জিন্নাত। ‘সংযুক্ত উদ্দেশ্য এবং এর পদ্ধতির সংক্ষিপ্তসার সম্পর্কিত’ বক্তৃতা উপস্থাপনা করেন, ইউনাইটেড পারপাসের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ইমার্জেন্সি রেসপন্স ইউনিট প্রধান মাসুদ রানা। প্রকল্পের অগ্রগতি উপস্থাপন করেন, ইউনাইটেড পারপাসের ইকরা প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুনীল জীবন চাকমা। কর্মশালার শুরুতে পরিচয় পর্বের পর স্বাগত বক্তৃতা করেন, ইউনাইটেড পারপাসের সহকারী প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপক শাহিনুর ইসলাম। কর্মশালায় প্রকল্পের কার্যক্রমে উপস্থিত সাংবাদিকরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। কর্মশালায় অনুভূতি প্রকাশে বক্তৃতা করেন, সাংবাদিক মুর্শেদুর রহমান খোকন, সাংবাদিক জাবেদ ইকবাল।