অনলাইন ডেস্কঃ
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
শনিবার বিকেলে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘শহীদ সন্তান-৭১’ আয়োজিত আলোচনা সভায় ওঠা দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
মোজাম্মেল বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই কোটা বাতিলের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। রাজাকারের সন্তানদের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা যাবে না। প্রশাসনে যদি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক না থাকে, তাহলে সেখানে তারা সেই গান গাইবে, যা পাকিস্তান আমলে গাইত। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের মূল্যয়ন প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই করবেন।
সভায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে ১৫ ডিসেম্বরকে জাতীয় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণাসহ সরকারের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি জানানো হয়।
অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে- শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের নাতি-নাতনিদের উত্তরাধিকার সুবিধা প্রদান এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা প্রবর্তন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ২৫% রাজনৈতিক কোটা নির্ধারণ, স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী পরিবারের তালিকা প্রণয়ন এবং যুদ্ধাপরাধী সন্তানদের বয়কট ও রাজাকারের তালিকা দ্রুত প্রস্তুত করে বিচার নিশ্চিত করা।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার প্রসঙ্গ টেনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “যারা খেলাফায়ে রাশেদীনের যমানায় তিন খলিফাকে হত্যা করেছিল, আর বলেছিল আমরা ইসলামের জন্য হত্যা করেছি। তারাই আজ বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিতে চায়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর তারা ধর্মের নাম নিয়ে বলেছিল বাংলা শিক্ষা করা নাযায়েজ, হিন্দু-নাসারাদের ভাষা শিখলে ইসলাম থাকবে না। এই উগ্রপন্থীরাই বলেছিল, ইংরেজি শিক্ষা করা হারাম, যার ফলে মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে একশত বছর পিছিয়ে গিয়েছে।
“সত্তরে তারা বলেছিল, শেখ মুজিবকে নৌকায় ভোট দিলে ধর্ম চলে যাবে। এরা সবসময় ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেশের উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটাতে চায়। তাদের প্রধান সমস্যা হলো, তারা দেশের উন্নয়নকে সহ্য করতে পারে না।”
গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও মুক্তিযোদ্ধা কবির আহম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, “আজ প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের নামের শুরুতে সন্মানসূচক ‘বীর’ যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে চরম লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। তখন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা তিনশত টাকা দেওয়া হত। এর চেয়ে অপমানজনক আর কী হতে পারে।”
‘শহীদ সন্তান-৭১’ সংগঠনের সভাপতি ড. সেলিনা রশীদ বলেন,“ অযত্ন, অবহেলা, পিতৃস্নেহ হতে বঞ্চিত শহীদ সন্তানেরা সময়ের পরিক্রমায় আজ এক প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কোন যড়যন্ত্র, জাতির পিতা বা তার পরিবারকে অপমান করার যে কোন দুঃসাহস রুখে দেওয়ার ক্ষমতা এখন শহীদ পরিবারদের আছে।”
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আল আমিন মুক্তির সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আইইবির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন, বিশিষ্ট আইনজীবি জাকির আহম্মেদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান অধ্যাপক এম.এ হাফিজ ও এমদাদুল হক।
সূত্রঃ বিডিনিউজ