অনলাইন ডেস্কঃ
নিবন্ধনহীনদের তথ্য রেখে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে ভিন্ন কথা। রোববার সারা দেশে গণ টিকাদান শুরু হওয়ার আগের দিন শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. নাজমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। টিকাদান কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিবন্ধনে সহায়তা করলেও সঙ্গে সঙ্গেই টিকা নেওয়া যাবে- বিষয়টি এমন নয়।
“অন স্পটে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি পরিষ্কার করতে চাই। তা হচ্ছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং আমাদের হাসপাতালগুলোতে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন, যাদের কাছে ট্যাব আছে, ইন্টারনেটসহ সিম কার্ড আছে। সেগুলোকে ব্যবহার করে যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না তাদের রেজিস্ট্রেশনে সহায়তা করবেন। তার মানে এই নয়, ওই মুহূর্তে রেজিস্ট্রেশন করে তখনই টিকা নিতে পারবেন।”
নিবন্ধনের পর টিকা গ্রহণের সময় জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
“আমরা কেবল এই রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়ায় তাদের সহায়তা করব,” বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
সুশৃঙ্খলভাবে করোনাভাইরাস টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামারদের ব্যবস্থাপনায় কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ তৈরি করেছে করেছে সরকার। টিকা গ্রহণে আগ্রহীদের সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (www.surokkha.gov.bd) গিয়ে নিবন্ধন করতে হচ্ছে।
তবে দেশের জনগণের একটি বড় অংশ স্মার্টফোন ব্যবহার না করায় তাদের পক্ষে এই নিবন্ধন করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, টিকাদানের আগে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে না পারলে টিকাগ্রহীতার সব তথ্য রেখে দেওয়া হবে, স্বাস্থ্যকর্মীরা পরে তা ডেটাবেইজে তুলে দেবেন।
তিনি শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিবন্ধন করতে পারেনি, কিন্তু কেন্দ্রে আসছে, তাদের ফেরত দেওয়া যাবে না।
“সেক্ষেত্রে তাদের নিবন্ধন করিয়ে টিকা দেওয়া হবে। যদি নিবন্ধন করতে দেরি হয় তাহলে টিকা দেওয়া হবে, পরে ডেটা এন্ট্রি করা হবে। আমরা কাউকে ফেরত দেব না।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মানুষকে টিকা গ্রহণে আগ্রহী করে তুলতে ভূমিকা রাখবেন এবং টিকা নিতে ইচ্ছুকদের শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে এলেই কাজ হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
মন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, “স্যার (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) যেটি বলেছেন, আপনি সেই কথাটি যদি খুব সহজ করে দেখেন ওই দিন ফেরত দেওয়ার মানে (রেজিস্ট্রেশনের দিন) কিন্তু তাকে টিকাদান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এমন নয়।”
নিবন্ধন ছাড়া টিকা দেওয়ার সমস্যার দিকটি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, “রেজিস্ট্রেশন না করে টিকাদান করতে গেলে পরবর্তী ডোজ কখন পাবে, সেটা নিয়ে ঝামেলা হতে পারে।
“বহু মানুষ হারিয়ে যাবেন। সামগ্রিকভাবে টিকাদান কর্মসূচির যে সাফল্য, যথা নিয়মে যথা বিরতিতে ডোজটি শেষ করা তা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে।”
সরকারের টিকাদান পরিকল্পনা অনুযায়ী, ‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করার পর সেখানে দেওয়া মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের তারিখ ও কেন্দ্র জানিয়ে দেওয়া হবে।
টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরে যথাসময়ে মোবাইলে এসএমএসেই দ্বিতীয় ডোজের কথাও জানিয়ে দেওয়া হবে।
টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বাইরে না যাওয়ার কথা আগেই বলেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম।
গত ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “কারণ আমাদের সমস্ত ডেটাগুলো একসঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে, এটা অ্যানালাইসিস করতে হবে। পরবর্তীতে আমরা এই ডেটাগুলোকে অনেকগুলো কাজে লাগাতে পারব।
“ভবিষ্যতে ভ্যাক্সিনেশনের ক্ষেত্রে আমরা এটাকে রোল মডেল হিসেবে ধরে নিয়ে এগোতে পারব। কাজেই আমরা ডিসকারেজ করব। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী হবে, সেটা আমরা জানি না। তবে আমরা এখন পর্যন্ত বলছি, আমরা এর বাইরে কাউকে অ্যালাউ করব না।”
সূত্রঃ জাগোনিউজ