অনলাইন ডেস্কঃ
সারাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমে বেসরকারি খাতকেও সম্পৃক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বুধবার ‘জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম: বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএমসিএ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতের নেতারা।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বেসরকারি খাত টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখানোয় তিনি ‘আনন্দিত’।
“আপনারা যুক্ত হতে চান, যেভাবে আপনারা পরীক্ষা এবং চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছিলেন। এ বিষয়ে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে আপনারাও ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবেন।”
তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া শুরু করতে যেসব নিয়মকানুন, শর্ত আছে, সেগুলো পালন শেষে কাজটি শুরু হবে।
“স্বাস্থ্যখাতে ৬০ শতাংশ সেবা দেয় বেসরকারি খাত। কাজেই তারা কেন বাইরে থাকবে। তারা সব কাজে যোগ দেবেন, এই সহযোগিতা আমরা করব।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর রোববার শুরু হয় সারা দেশে গণ টিকাদান।
সারা দেশে এক হাজারের বেশি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে মোট ৭ হাজার ৩৪৪টি দল প্রস্তুত করা হয়েছে।
টিকাদানের পুরো ব্যবস্থাপনাই এখন চালানো হচ্ছে সরকারিভাবে। টিকা নিতে আগ্রহী সবাইকে সরকারের সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (www.surokkha.gov.bd) গিয়ে নিবন্ধন করে নিতে হচ্ছে।
আলোচনায় বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএ মুবিন খান করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান।
বেসরকারি হাসপাতালে বিক্রির জন্য প্রাথমিকভাবে সরকারের কাছে ১০ লাখ ডোজ টিকা চেয়ে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসা সেবা দেওয়া- সব ক্ষেত্রেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। তাহলে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন তাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না।”
তিনি বলেন, টিকা দেওয়ার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের অনুমোদন ও মূল্য নির্ধারণ করে দেবে সরকার। এখন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে টাকার বিনিময়ে নমুনা পরীক্ষা করা যায়। টিকার ক্ষেত্রেও কেউ চাইলে সরকারি বিনামূল্যের টিকা নিতে পারবেন, চাইলে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে টিকা কিনে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। সবাইকে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে।
সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ সরকার হাতে পেয়েছে। এছাড়া ভারতের উপহার হিসেবে এসেছে আরও ২০ লাখ ডোজ।
প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে আগামী পাঁচ মাসে আরও আড়াই কোটি ডোজ পাঠানোর কথা রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটের। এছাড়া জুনের শেষ নাগাদ কোভ্যাক্স থেকে আরও ১ কোটি ২৭ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের।
সেরাম ইনস্টিটিউটের ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে টিকা সরবরাহ করছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। ফেব্রুয়ারি থেকে বেসরকারিভাবেও তারা টিকা বিক্রির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল।
আর বেসরকারি উদ্যোগে করোনাভাইরাসের টিকা আমদানি এবং কীভাবে প্রয়োগ হবে তা নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে বলে গত মাসে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, এফবিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়ানস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনোয়ার খান উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ