ক্রীড়া ডেস্কঃ
ক্লাবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লিগ ম্যাচের রেকর্ড ছোঁয়ার রাতটাকে আপন রঙে রাঙালেন লিওনেল মেসি। ট্রেডমার্ক শটে অসাধারণ দুটি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থের গোলে রাখলেন অবদান। নজরকাড়া ফুটবলে দেপোর্তিভো আলাভেসকে উড়িয়ে দিল বার্সেলোনা।
কাম্প নউয়ে শনিবার রাতে লা লিগার ম্যাচটি ৫-১ গোলে জিতেছে রোনাল্ড কুমানের দল। মেসির মতো দুই গোল করেন ফ্রান্সিসকো ত্রিনকাও, তাদের আরেক গোলদাতা জুনিয়র ফিরপো।
বার্সেলোনার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৫০৫টি লা লিগার ম্যাচ খেলা চাভি এরনান্দেসকে স্পর্শ করলেন মেসি।
গত অক্টোবরে নিজেদের মাঠে বার্সেলোনাকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছিল আলাভেস। এবার তাদের কোনো সুযোগই দেননি মেসি-গ্রিজমানরা। শুরুর দিকে স্বাগতিকদের কিছুটা ক্লান্ত-ছন্নছাড়া মনে হলেও বিরতির পর পাল্টে যায় চিত্র; স্বরূপে নিজেদের মেলে ধরে তারা।
আবারও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে টপকে লিগ টেবিলের দুইয়ে উঠল বার্সেলোনা। ২২ ম্যাচে দুই দলেরই অবশ্য পয়েন্ট সমান ৪৬।
ম্যাচের শুরু থেকে প্রায় ৭৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে চাপ ধরে রাখে বার্সেলোনা। যদিও প্রথম গোলের আগ পর্যন্ত তাদের আক্রমণে পরিকল্পনার তেমন ছাপ ছিল না।
তিন তরুণের বোঝাপড়ায় ২৯তম মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। শুরু থেকে রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি পুরো মাঠে ছোটাছুটি করা অস্কার মিনগেসা ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান। বাঁ দিকে ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে মাঝ বরাবর বাড়ান তরুণ মিডফিল্ডার ইলাইস মোরিবা। আর প্রথম ছোঁয়ায় নিচু শটে জটলার মধ্যে দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন ত্রিনকাও।
বার্সেলোনার হয়ে ত্রিনকাওয়ের এটি ১৮তম লিগ ম্যাচ, তবে শুরুর একাদশে প্রথম। উপলক্ষটা দারুণভাবে রাঙালেন ২১ বছর বয়সী পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ড। গত সপ্তাহে লিগে রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে দলের ৩-২ ব্যবধানে জয়ে শেষ সময়ে জয়সূচক গোলটিও করেছিলেন তিনি।
পরের পাঁচ মিনিটে আরও দুটি গোল পেতে পারতো বার্সেলোনা। ৩৫তম মিনিটে গ্রিজমানের শট গোলরক্ষক ঠেকানোর পর ফিরতি বল জালেও পাঠিয়েছিলেন মেসি। তবে ভিএআরের সাহায্যে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। ভিএআরে গ্রিজমানকে অফসাইড দেখালেও সিদ্ধান্তটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ আছে যথেষ্ট।
বিরতির ঠিক আগে একক নৈপুণ্যে দুর্দান্ত গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি। সের্হিও বুসকেতসের পাস পেয়ে জায়গা বানিয়ে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে ট্রেডমার্ক শটে লক্ষ্যভেদ করেন আর্জেন্টাইন তারকা। বল কাছের পোস্টে লেগে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়।
টানা পাঁচ ম্যাচে গোল পেলেন মেসি।
দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটে বার্সেলোনার রক্ষণে ভীতি ছড়ায় সফরকারীরা। তবে ছয় গজ বক্সের বাঁ দিক থেকে পেরেজের উঁচু শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।
আট মিনিট পর প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবধান কমায় আলাভেস। মোরিবার ভুল পাস ধরে দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শটে মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনকে পরাস্ত করেন লুইস রিওহা।
গোল খেয়ে যেন আরও তেতে ওঠে বার্সেলোনা। পাঁচ মিনিটে তিনটি নিশ্চিত সুযোগ পায় তারা; কিন্তু একবারও মেলেনি জালের দেখা। ৬২তম মিনিটে ত্রিনকাওয়ের শট দারুণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক পাচেকো। এরপর মেসির শট অল্পের জন্য হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। ছয় গজ বক্সে ফাঁকায় সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গ্রিজমানও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন।
৭৪তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে স্কোরলাইন ৩-১ করে ত্রিনকাও। মাঝমাঠ থেকে পেদ্রির দারুণ থ্রু পাস ধরে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি, সামনে একমাত্র বাধা গোলরক্ষক, কিন্তু শট নিতে একটু দেরি করে ফেলেন তিনি। এগিয়ে গিয়ে পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন পাচেকো, তাতে বিপদ কমল না একটুও। ফাঁকায় বল পেয়ে প্লেসিং শটে গোলটি করেন ত্রিনকাও। দুই ম্যাচে তার গোল হলো তিনটি।
এই গোলের রেশ তখনও কাটেনি, পরের মিনিটে আবারও আলাভেসের জালে বল! আরও একবার সতীর্থের পাস ধরে ডান দিক থেকে বাঁ দিকে একটু এগিয়ে বাঁ পায়ের উঁচু শটে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে বল পাঠান মেসি।
আসরে তার গোল হলো ১৫টি। এক গোল বেশি নিয়ে গোলদাতার তালিকায় চূড়ায় লুইস সুয়ারেস।
আর ৮০তম মিনিটে দারুণ গোছালো আক্রমণে স্কোরলাইন ৫-১ করেন ফিরপো। ডি-বক্সে মেসির চিপে ডান দিকে বল পেয়ে ছয় গজ বক্সে বাড়ান গ্রিজমান। বাকি কাজটুকু সারেন ডিফেন্ডার ফিরপো।
মৌসুমে শুরুর অধারাবাহিকতা কাটিয়ে দারুণ ছন্দে এগিয়ে চলার মাঝে গত বুধবার ছন্দপতন হয় বার্সেলোনার; হেরে বসে কোপা দেল রে সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে সেভিয়ার বিপক্ষে। তবে লা লিগায় ফিরে পুরনো রূপেই ধরা দিল দলটি। লিগে টানা সাত ম্যাচ জিতল তারা।
দিনের প্রথম ম্যাচে গ্রানাদাকে ২-১ গোলে হারায় শিরোপার দিকে ছুটে চলা আতলেতিকো মাদ্রিদ। ২১ ম্যাচে ১৭ জয় ও তিন ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ৫৪।
সূত্রঃ বিডিনিউজ