এ.এম হোবাইব সজীব, চকরিয়া:
বঙ্গোপসাগরে ইতোমধ্যেই ব্যাপক ভাবে মাছ ধরার কাজে নেমে পড়েছেন জেলেরা। প্রতি বছর শ্রাবন মাসের আগে জেলেরা মৌসুম শুরু করলেও চলতি বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বিপুল টাকা বিনিয়োগ করে মালিকরা তাদের ট্রলার মাছ ধরতে নামালেও কাটেনি জলদস্যু আতংক।
বিভিন্ন মোকামে শুটকি উৎপাদন শুরু না হলে জেলেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সমুদ্রে মাছ ধরার কাজে। ভাদ্র মাসের মাঝামাঝিতেই শুরু হবে শুটকি উৎপাদন। এখন যা মাছ ধরা হচ্ছে তার সবই বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করছেন জেলেরা। যার সুবাদে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে সামুুদ্রিক মাছের পরিমাণ বেড়েছে।
ট্রলার মালিক নুরুল আবচার জানিয়েছেন, আমাদের একটিই আতংক তা হল জলদস্যু। জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে মৎস্য উৎপাদন আরো বহুগুন বেড়ে যাবে। শুরুতে যেভাবে মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।
বিগত সময়ে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সমুদ্রের মাছের পরিমাণ বেড়েছে। প্রজনন ক্ষেত্রগুলো সুরক্ষিত থাকায় মাছের পোনার বিস্তার ঘটেছে। জলদস্যুর সমস্যাটি সুরাহা হলেই আর কোন সমস্যা থাকবে না। সাগরে জেলেদের নিরাপত্তা না থাকায় তাদের পারিশ্রমিক বেশি দিতে হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রলার মালিকরা।
ট্রলার মালিক বদরউদ্দিন জানিয়েছেন, কোন সমস্যা হলে কোন থানায় অভিযোগ করা যায় না। সমুদ্র এলাকা কোন থানার আওতায় তা নির্ধারণ না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলেদের। কোন সমস্যা হলে অভিযোগ করা যায় না বিধায় জলদস্যুরা আরো উৎসাহিত হয়। আমরা চাই এ বিষয়টি সমাধান হলে জেলেরা আরো স্বস্থি পাবে।
বঙ্গোপসাগরে চলছে মাছ ধরার ভরা মৌসুম। আর এ ভরা মৌসুমে উপকূল জুড়ে জলদস্যুদের তা-ব কোম মতে থামানো যাচ্ছে না। সাগরে মাছ আহরণ করতে গেলে হামলার শিকার হচ্ছেন জেলেরা। সম্প্রতি সাগরে জলদস্যুরা মাছ ধরার ট্রলারে আবার ও ডাকাতি সংগঠিত করেছে। মাছ, জালসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে জলদস্যুরা। এ সময় জলদস্যুদের গুলিতে আহত হয়েছে জেলেরা।
জানা যায়, প্রায় ১০০ কিলোমিটার সাগর উপকূল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অর্ধ শতার্ধিক জলদস্যু সর্দার । সাগরকে নিরাপদ করার দাবিতে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বিগত সময় কক্সবাজার শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঝড় তুললে ও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না বলে জানান জেলে সম্প্রদায়ারের লোকজন।
জেলা বোট মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, সাগরে মাছ আহরণ করতে গিয়ে সম্প্রতি একই কায়দায় সাগরের মহেশখালী, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ কক্সবাজার সদর উপকূলে অর্ধ ডজন ফিশিং বোট জলদস্যুদের কবলে পড়ে। দস্যুরা ট্রলারের মাছ, জাল ও জ্বালানি লুটের পাশাপাশি বেদম মারধর করে জেলেদের সাগরে ফেলে দেয়। একই সঙ্গে জেলেদের অপহরণ করে আদায় করছে মোটা অংকের টাকা। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে খুন বা আহত করে সমুদ্র ভাসিয়ে দিচ্ছে জেলেদের।
ডাকাতি আশংকাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছেন । প্রসঙ্গত, উপকূলের জলদস্যু সর্দারেরা সাগরে ‘রাজা’ নামে পরিচিত লাভ করেছে। জানা গেছে, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার অর্ধ শতাধিকের জলদস্যুরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সাগরে।
মাত্র অর্ধশত জলদস্যুদের হাতে কক্সবাজারের টেকনাফ, সোনাদিয়া- কুতুবদিয়া, পেকুয়াসহ জেলার পুরো সমুদ্র উপকূল জিম্মি হয়ে পড়েছে।
মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলাপ কালে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে বিভিন্ন এলাকার ৫০ জনের জলদস্যুর সর্দারের নেতৃত্বে দু’ শতাধিক দস্যু রাজত্ব চালাচ্ছে। যে সব জলদস্যু বাহিনী তান্ডব চালাচ্ছে এরা হচ্ছে মহেশখালীর ধলঘাটার জসু বাহিনী, সোনাদিয়ার জাম্বু বাহিনী, কুতুবজোমের রবি বাহিনী, কুতুবদিয়ার বাদশাহ মাঝি প্রকাশ বাদশা বাহিনী, কালারমারছড়ার কালা জাহাঙ্গীর, মানিক ও উত্তরনলবিলার একরাম বাহিনী, শফি বাহিনী, নাছির বাহিনী উল্লোখযোগ্য।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জলদস্যুরা নিজ নিজ এলাকা থেকে এসে জড়ো হয়ে সাগরে ডাকাতি করে ফের নিজ বাড়ী ঘরে ফিরে যায়। এ অবস্থায় সাগরকে জেলেদের জন্য নিরাপদ করতে হলে জলদস্যু বাহিনীর প্রধানদের নিজ নিজ এলাকার আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে বলে জানালেন জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির নেতারা।
উপকূলীয় ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল খায়ের জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় এবং লোকসানের কারণে অনেকেই এ পেশা থেকে চলে গেছেন। বিগত যেকোন সময়ের মধ্যে এ মৌসুমে ট্রলারের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। কক্সবাজার ভিত্তিক যারা ব্যবসা করে তাদের জন্য প্রধান সমস্যা সোনাদিয়ার মোহনা। সম্প্রতি বতইল্যা নিহত হলেও জাম্মুসহ অনেকেই এখনো বহাল তরিয়তে আছে। কোন ট্রলার জাম্বু বাহিনীর কারণে কক্সবাজারে প্রবেশ করতে চায় না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার দায়িত্বরত কোষ্টগার্ডের ষ্টেশন কমান্ডার ও সংশ্লি-ষ্ট প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন।