আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত এবং অং সান সু চিসহ রাজনীতিকদের আটকের প্রতিবাদে সোমবার সাধারণ ধর্মঘট এবং রাস্তায় রাস্তায় আরও বিক্ষোভ দেখানোর ডাক দিয়েছে মিয়ানমারের অভ্যুত্থানবিরোধীরা।
মান্দালয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ২ জন নিহতের পর সংঘাত আরও প্রাণ কেড়ে নিতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারও করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, আরও সেনা মোতায়েন এবং নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও মিয়ানমারের জেনারেলরা দেশটিতে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের বিরোধিতা এবং অং সান সু চিসহ আটকদের মুক্তির দাবিতে চলা বিক্ষোভ ও আইন অমান্য কর্মসূচি বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে।
অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখ মং সৌংখা সোমবারের বিক্ষোভে যোগ দিতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
“যাদের বাইরে আসার সাহস নেই, তারা ঘরে থাকুন। যেভাবেই হোক আমি বাইরে বের হব। আমি জেনারেশন জেডকে (চলতি শতকের দ্বিতীয় দশকে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে) প্রত্যাশা করছি। পার্টনাররা, চল একত্রিত হই,” রোববার রাতে ফেইসবুক পোস্টে এমনটাই লিখেছেন এ তরুণ রাজনৈতিক কর্মী।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাসের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইয়াংগনের বাসিন্দারা। কূটনৈতিক এ মিশনগুলোও বিদেশি হস্তক্ষেপ চাওয়া বিক্ষোভকারীদের একত্রিত হওয়ার কেন্দ্র হয়ে উঠছিল।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে তারিখের মধ্যে সংখ্যাগত মিলকে ‘শুভ’ বিবেচনা করা হয়; বিক্ষোভকারীরা এ কারণে সোমবারকে (২২/২/২০২১) বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন, তারা এদিনকে ১৯৮৮ সালের ৮ অগাস্টের সঙ্গে তুলনা করছেন। সেদিনের বিক্ষোভকে সামরিক জান্তা কঠোর হস্তে দমন করেছিল, ঝরেছিল রক্ত।
মিয়ানমার ২০১১ সালের আগেও প্রায় অর্ধশতক সেনা শাসনে ছিল। সে সময়ের তুলনায় এবার নিরাপত্তা বাহিনীকে তুলনামূলক নমনীয়ই মনে হচ্ছে। যদিও এর মধ্যে মান্দালয়ে তাদের গুলিতে ২ জন নিহত হয়েছে। নেপিডোতে ৯ ফেব্রুয়ারির বিক্ষোভে মাথায় গুলিবিদ্ধ এক তরুণী শুক্রবার মারা গেছে।
দেশটির সেনাবাহিনী বিক্ষোভে আহত পুলিশের এক সদস্যের মৃত্যুর কথাও জানিয়েছে।
মান্দালয়ে শনিবারের বিক্ষোভে গুলি এবং ২ জন নিহতের ঘটনাও বিক্ষোভকারীদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারেনি; পরদিন রোববার একই শহরে লাখো মানুষ সমাবেশ করেছে, বড় বিক্ষোভ হয়েছে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াংগনেও।
দেশটির রাষ্ট্র মালিকানাধীন গণমাধ্যম এমআরটিভি সোমবারের কর্মসূচি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করেছে।
“বিক্ষোভকারীরা এখন জনগণকে বিশেষ করে আবেগপ্রবণ কিশোর-যুবকদেরকে উসকে দিয়ে সংঘাতের পথে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রাণহানি হতে পারে,” বলেছে তারা।
কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ নিয়ে ‘সর্বোচ্চ সংযম দেখাচ্ছে’ বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; কিছু দেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে জানিয়ে বিবৃতিতে তাদের তিরস্কারও করা হয়েছে।
পশ্চিমা অনেক দেশ এরই মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগের সমালোচনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি মিয়ানমারে সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে; জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মারাত্মক শক্তি প্রয়োগকে অগ্রহণযোগ্য অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ