লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
ডায়াবেটিস হলে ভাত-রুটি খাওয়া ছেড়ে দেন অনেকেই। কারণ তারা মনে করেন, কার্বোহাইড্রেট খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক নয়।
কারণ কর্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবারের মধ্যেও ভালোমন্দ রয়েছে। যদি আপনি ভালো খাবারটি বেছে নেন, তবে আপনি উপকৃত হবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কম কার্বসযুক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ ছাড়াও দিনে কতটুকু কার্বস গ্রহণ করবেন, তা নির্ভর করবে আপনার ডায়াবেটিস ওঠা-নামার উপর।
ডায়াবেটিসএভারিডে.কম এর প্রতিষ্ঠাতা, টবি স্মিথসন (এমএস, আরডিএন, এলডি, সিডিই (পিডাব্লুডি টাইপ ১) বলেছেন, কার্বস হলো শর্করা, স্টার্চ এবং ডায়েটরি ফাইবারের উৎস। কার্বস আমাদের শরীরের বৃহত্তর পুষ্টি উপাদানগুলোর পাশাপাশি প্রোটিন এবং ফ্যাটের জ্বালানী উত্স হিসেবে কাজ করে।
সবচেয়ে ভালো কার্বোহাইড্রেটের উৎস রয়েছে ফল, শাক-সবজি, ব্রাউন রাইস ও হোলগ্রেইন খাবারে। অন্যদিকে সরল কার্বস যেমন- চিনি, সাদা ভাত, পাউরুটিসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যা আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে।
কীভাবে কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করাকে প্রভাবিত করে?
>> হজমের সময়, কার্বযুক্ত উপাদানগুলোতে থাকা স্টার্চ এবং শর্করা ভেঙে যায়। শরীর কত তাড়াতাড়ি এগুলো ভাঙতে সক্ষম হবে, তা নির্ভর করে খাদ্যের উপর।
>> শরীর বেশিরভাগ কার্বসগুলোকে গ্লুকোজ হিসেবে রূপান্তর করে। এটি একটি সাধারণ চিনি। গ্লুকোজ রক্ত প্রবাহে শোষিত হয়; যেখানে এটি শক্তির উত্স হিসেবে কোষ এবং টিস্যুতে জমা থাকে। অতিরিক্ত গ্লুকোজ পেশী এবং লিভারে সংরক্ষিত থাকে।
>> দেহ রক্তের সুগারকে প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রণ করে; যাতে এটি জ্বালানী সরবরাহ করতে পারে। খাবারের পর রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে গেলে অগ্ন্যাশয় রক্তে ইনসুলিন নিঃসরণ করে। ইনসুলিন এখানে চাবি হিসেবে হিসেবে কাজ করে। যার ফলে কোষেগুলোতে সহজেই গ্লুকোজ প্রবেশ করতে পারে।
>> রক্তে শর্করার পরিমাণ কম থাকলে, অন্য একটি হরমোন ‘গ্লুকাগন’ লিভার থেকে সঞ্চিত গ্লুকোজ ছেড়ে দিয়ে স্তরগুলো পূরণ করে। যখন কারো ডায়াবেটিস হয়; তখন অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরিতে ব্যর্থ হয়।
কার্বোহাইড্রেট কী ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে?
কিছু ক্ষেত্রে নয়। কারণ পরিমিত কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে। বিশেষ করে যাদের পরিবারে ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন; তাদের জন্য কার্বোহাইড্রেট একটু কম করে খাওয়া উচিত।
প্রতিদিন ডায়াবেটিস রোগীদের কতটুকু কার্বস খাওয়া উচিত?
একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিটিক্সের গবেষণা অনুযায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ১০০-১৫০ গ্রামের মধ্যেই কার্বস রাখা উচিত। তাও ডায়াবেটিসের পরিমাণ অনুযায়ী। আপনার ডায়াবেটিস যদি বাড়তি হয়; তাহলে যতটুকু পারবেন কমিয়ে কার্বস গ্রহণ করবেন। আর অবশ্যই কার্বসের উৎস যেন স্বাস্থ্যকর হয়।
বিভিন্ন ফল, শাক-সবজি ও হোলগ্রেইন থেকেই যেন কার্বস নেওয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। না হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে আপনি প্রতিদিন কতটুকু কার্বস খাচ্ছেন, সে হিসাব লিখে রাখতে পারেন। যেমন- ১ কাপ রান্না করা ওটমিলে আপনি পেয়ে যাবে ৩০ গ্রাম কার্বস।
অধিক পুষ্টিসম্পন্ন কম কার্বোহাইড্রেট খাবার নির্বাচনের পাশাপাশি সঠিক ডায়েট ও শরীরচর্চা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জরুরি। স্বল্প কার্বযুক্ত ডায়েট অনুসরণ করে ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস রোগীরাও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
মনে রাখবেন, আপনি যেভাবেই ডায়েট তৈরি করুন না কেন, তাতে অবশ্যই প্রোটিন, চর্বি এবং শর্করা থাকতে হবে। কার্বোহাইড্রেট শক্তির উত্স, তাই একে পুরোপুরিভাবে পরিহার করা উচিত নয়। জেনে নিন কীভাবে লো-কার্ব ডায়েট করবেন?
কিটোজেনিক ডায়েট
খুব কম শর্করা, উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ডায়েট হলো কিটো ডায়েট। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে এই খাদ্যতালিকা বেশ জনপ্রিয়। এটি ওজন ও ক্ষুধা কমায়। কিটো ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট ৫০ গ্রামের কম থাকে, কখনো ২০-৩০ গ্রামও থাকতে পারে।
জিরো কার্ব
অনেকেই তাদের ডায়েট থেকে সব শর্করা বাদ দিতে চান। এতে সাধারণত প্রাণিজ খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে। জিরো কার্ব ডায়েটে ভিটামিন সি ও ফাইবারের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি হয়। এ কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য ততটা ভালো নয়।
এবার জেনে নিন লো-কার্ব ডায়েট শরীরের জন্য ভালো না-কি খারাপ?
>> কার্বোহাইড্রেট হলো শরীরের প্রাথমিক জ্বালানি। যা পেশি ও মস্তিষ্কের শক্তি জোগায়। লো কার্ব ডায়েটে পেশীর দুর্বলতা, বিভ্রান্তি, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, অমনোযোগ এবং পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। খেলাধুলা বা কায়িক পরিশ্রম বেশি করা ব্যক্তিদের এ ধরনের ডায়েট অনুসরণ করা উচিত নয়।
>> শরীরে কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি হলে কিটোসিস হতে পারে। কারণ কার্বোহাইড্রেটের অভাব হলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ (শক্তি) থাকে না। ফলে শরীর ফ্যাট বার্ন করতে শুরু করে। যখন ফ্যাট বেশি বিপাক হয়, তখন লিভার কিটোন নামের এক ধরনের অম্ল তৈরি করে।
অতিরিক্ত মাত্রায় কিটোন তৈরি হলে শরীরে সোডিয়াম ও পানির ঘাটতি দেখা দেয়। একে বলে কিটোসিস। এ সমস্যায় ক্লান্তি ও শক্তিহীনতা দেখা দিতে পারে। সতর্ক না থাকলে এটি জটিল আকার ধারণও করতে পারে।
সূত্রঃ জাগোনিউজ