অনলাইন ডেস্কঃ
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি গঠনে কোনো ধরনের নির্বাচন আয়োজন করা যাবে না। যেসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং বা গভর্নিং কমিটির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে সেখানে ‘অ্যাডহক’ কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দেয়া হবে। এ অবস্থায় স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ ও গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
এর ব্যত্যয় ঘটালে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত এক বছর থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টিভি, কমিউনিটি রেডিও, অনলাইনসহ ভার্চুয়াল নানা মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চলমান। আগামী ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাকালীন বন্ধের মধ্যে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সদস্যরা এখনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। যদিও দেশে করোনা শুরুর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির নির্বাচন বা নতুন কমিটি গঠন করা যাবে না বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এ নির্দেশনা অমান্য করায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শোকজ করে কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও যেসব পরিচালনা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে তা বাতিল হয়ে যাবে। সেই কমিটি দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করাটা অবৈধ বলে গণ্য হবে। এ ধরনের অভিযোগে শতাধিক কলেজকে শোকজ ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী করোনার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই বছর মেয়াদি পরিচালনা কমিটির নির্বাচন আয়োজন করা যাবে না। বর্তমানে চার সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দেবে শিক্ষা বোর্ড। এ কমিটিতে একজন সভাপতি, অধ্যক্ষ সদস্য সচিব, অভিভাবক ও শিক্ষক প্রতিনিধি থাকবেন। তারা পরবর্তী ছয় মাস প্রতিষ্ঠানের ভর্তি, পরীক্ষাসহ রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। শিক্ষক নিয়োগসহ নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘অবৈধ কমিটি, পাঠদানের অনুমোদন ও একাডেমিক স্বীকৃতির নবায়ন ছাড়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারীদের চিহ্নিত করতে সব শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছক আকারে এ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হচ্ছে। ত্রুটি পাওয়া গেলে তাদের শোকজ করা হচ্ছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে পরিচালনা কমিটি ভেঙে দেয়া, পাঠদানের অনুমোদন বাতিলসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’ এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ায় রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজকে শোকজ করা হবে বলেও জানান তিনি।
একাধিক অভিভাবকের মাধ্যমে জানা গেছে, রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে করোনার মধ্যে পরিচালনা কমিটির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভোটারদের খসড়া তালিকা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যরা ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে।
জানতে চাইলে অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল হক দুলু জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, নিয়োগ, বদলি ও কেনাকাটা বাণিজ্য করতে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা নানাভাবে বারবার ক্ষমতায় বসতে নির্বাচনে যুক্ত হচ্ছেন। শিক্ষার্থী-অভিভাবকের স্বার্থের চাইতে বাণিজ্যটাই তাদের কাছে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি-বদলি ও শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করা হচ্ছে। অধ্যক্ষসহ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ কারণে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বর্তমানে প্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।’
তিনি আরো জানান, বন্ধের মধ্যে স্কুলের ফান্ডভুক্ত ২৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। মাথাপিছু ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা আদায় করে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে। অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যয় বাড়ানো হবে। এজন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগামী ৮ মে আমাদের গভর্নিং কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত আসায় আমরা পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। আমরা এজন্য প্রস্তাব পাঠাবো, শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমোদন দিলে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। অনুমোদন না দেয়া হলে তা স্থগিত রাখা হবে। কমিটির মেয়াদ শেষের ৮ থেকে ৯ মাস আগে এ প্রস্তুতি শুরু করা হয়।’
শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে এই অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাদের বেশকিছু বিষয়ে শিক্ষক শূন্য হয়ে গেছে। এ কারণে একজন শিক্ষককে দুটি করে সেকশন চালাতে হচ্ছে। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফান্ড থেকে বেতন পরিশোধ করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বলে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।’
করোনার মধ্যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করা যাবে না। অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন নিয়ে রুটিন কাজ করতে হবে। এ সময় শিক্ষক নিয়োগ ও বড় ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচন আয়োজন কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কমিটির মেয়াদ শেষ হলে তাদের অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশনা ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধি নির্বাচন আয়োজন করা যাবে না। যদি কেউ তা করে থাকে বা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বহাল রাখা হয় তাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘পরিচালনা কমিটির সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দুই দফায় সভাপতি হলে তৃতীয় দফায় তার আর এই পদে আসার সুযোগ থাকবে না। চতুর্থ দফায় আবারো সে এ পদে আসার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।’
সূত্রঃ জাগোনিউজ