উদ্ভ্রান্ত:
আমার মনের মেঘে উথাল-পাথাল বিষ্টি
সমুদ্র-গর্জনে সবিশেষে ডুবে আছে চিরশান্তি
এলো না কোনো তুফান, হাহাকার-জুড়ে অস্তমিত ক্রন্দন,
বিমূর্ত স্বপ্নগর্ভে প্রয়াত প্রেমিকার অশুভদৃষ্টি
বর্তমান প্রেমিকা অবহেলিত হৃদয়কোণে;
এক যুদ্ধজাহাজ কোটি কোটি বিচ্ছেদের চারণক্ষেত্র,
অজাতশত্রু পথিকের প্রেমে নেই তিলপরিমাণ জায়গীর
পঞ্চবৈরিতায় ঠাঁই হয় না কারো,
ঠাঁসাঠাসিতে বহুনির্বাচনী প্রশ্নপর্ব
উত্তরমালায় কুন্ঠিত যৌবন,
অবগুন্ঠিত প্রলাপ এছাড়া অমার্জিত আচরণ।
উদ্ভ্রান্ত তুমি ব্যূহের দ্বারে একা দাঁড়িয়ে
সহস্র সুখের বাসর পোড়ো,
নির্দ্বিধায় বলে উঠতে পারো,
কখনো কাউকে ভালোবাসোনি
একই মর্মে আমারো নেই কোনো উৎসাহ,
আগ্রহের আভাস চিরউদাসী
যেনো পরস্পরে নেমেছি অপ্রেম প্রতিযোগিতায়!
আমাদের রূপজ মোহো, দেহজ প্রেম—
সংঘাতময় চেতনায় ভাবের অত্যুক্তি!
আমি ভবের পাগল তুমি ভাবের!
বিনাশ করা সহজ বটে, তবু বেঁচে থেকে অন্তত এই জেনেছি,
সৃষ্টিতেই জাগরণ ঘটে।
অপ্সরী-কিন্নরীর অপেক্ষায় একমাত্র জীবন
বিকিয়ে দেওয়া উচ্চমার্গীয় পাপ
আমরা বেঁচে থাকবো মানুষের ভিড়ে
আজকের এই আওভান আবারো ফিরে আসার,
প্রাণের ভীড়ে নবজীবন পাবার;
মহত্ত্বের বিকাশ না-হোক— কিছু সুখ পেয়ে,
কিছু কিছু দুঃখ গড়িয়ে নিলে মন্দ কীসে!
*************************************************************************************************
মিশ্রদর্শন
মহাসমারোহে কেটে গ্যাছে এক কাল্পনিক বাসর
ঋদ্ধ-জ্ঞানে তাবৎ সমঝদার উড়িয়েছেন এক কোটি পায়রা,
ঝিনুক-কুড়োনো অস্তগামী সন্ধ্যায়
প্রবাল-প্রাচীর মায়াময় দ্যুতি ছ’ড়িয়েছে,
কাশবনে রৌদ্রদগ্ধ দুপুর, তুলোর আদোলে উড়তে থাকা
ফড়িঙেরা—আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে এই জন্মের সকল স্মৃতি
অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকা আমি উৎফুল্ল,
যেনো কবেকার লুকিয়ে পড়া পুরোনো
আমি ভুল করে হঠাৎ প্রত্যক্ষবাদী।
চব্বিশে জানুয়ারির এক স্নিগ্ধ সকালে নিষ্প্রভ আমি—
প্রকৃতির মনে জাঁকিয়ে ওঠা শীত গোটাদেহে
গুটিপোকার খোলস-ছাড়ানো আনন্দ,
সেদিন আমিও ছিলাম প্রজাপতির ডানায় ভর করা
এক উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত শিশু—
দেহের খ্যালায় জন্মে যাওয়া অস্থাবর প্রোটোপ্লাজম।
বিজ্ঞানের রেশ কাটিয়ে ধার করেছি প্রকৃতি!
প্রবল বিদ্রোহে বুকে প্রেম ধারণ করে—
অনুবাদ করে নিয়েছি আমার ব্যক্তিগত ঈশ্বরের স্বরূপ,
মানবাত্মা আর প্রেতাত্মার মাঝে অবিচ্ছেদ্য সংকরায়ন ঘটিয়ে
এক জন্মে জন্মান্তরের ব্যাকুলতা হাতড়ে পেয়েছি;
শৈত্যপ্রবাহের অবসরে সভা-ভঙ্গের স্পর্ধা দেখিয়ে
আনুষ্ঠানিকভাবে কেঁদেছিলাম,
ঐ কান্না আমার ভাষায় ভীষণ প্রায়শ্চিত্ত!
নচেৎ গাল গড়িয়ে বিন্দু বিন্দু আঘাৎ বিস্মৃত হয়ে যেতো
কালের গহ্বর, প্রেমাস্পদ রজনীর টানেই আমার ফিরে আসা
নবান্নের ধান আর সৈন্ধব লবণের এ এক
অমীমাংসিত মিশ্রদর্শন।