রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে এবার জাতীয় শোক দিবসের প্রথম প্রহরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জন্মদিন উদযাপনের কোনো আনুষ্ঠানিকতা রাখছেন না। খবর বিডিনিউজের।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিদিনের মতো গুলশানের কার্যালয়ে যাবেন তিনি (খালেদা)। তবে তবে প্রথম প্রহরে কেক কাটার কোনো আনুষ্ঠানিকতা সেখানে হচ্ছে না।”
অন্যান্য বারের মতো এবার রাত ১২টার পর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও চেয়ারপারসনের জন্মদিনের কেক কাটার কোনো কর্মসূচি নেই বলে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উত্তরাঞ্চল-মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক বন্যায় মানুষের দুর্দশা, সর্বত্র গুম-খুনে মানুষের লাশ আর লাশ, দলের নেতা-কর্মীদের ওপর গ্রেপ্তার-নিপীড়ন-নির্যাতনের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই ম্যাডামের জন্মদিনে এবার আমরা কেক কাটার অনুষ্ঠান করছি না।”
খবর নিয়ে জানা গেছে, গুলশানের ক্যাফেতে সন্ত্রাসী হামলাসহ সারাদেশে নানা ঘটনাবলীয় পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার নির্দেশে কেক কাটার অনুষ্ঠান হচ্ছে না। দলের এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যুবদল, মহিলা দল ও ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এবছর কেক কাটার কোনো কর্মসূচি রাখেনি। তারা বিভিন্ন মসজিদ ও মন্দিরে প্রার্থনা সভা করবে বলে জানিয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিন ১৫ অগাস্ট খালেদা জিয়ার কেক কাটার ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, এদিন ‘ভুয়া জন্মদিনে’ কেক কাটার মাধ্যমে খালেদা কার্যত বঙ্গবন্ধু হত্যার দিনটি ‘উদযাপন’ করেন।
বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়া সোমবার ৭২ বছরে পা রাখছেন।
গত দুই যুগ ধরে ১৫ অগাস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন হলেও তার আরও কয়েকটি জন্মদিনের হদিস পাওয়া যায়। তার জন্মসাল নিয়েও দুই রকম তথ্য পাওয়া যায়।
খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালে বলে তার নতুন করা পাসপোর্টে থাকলেও গয়েশ্বর রায় গত বছর জানান, তার নেত্রীর জন্ম ১৯৪৫ সালে।
বাংলা পিডিয়াসহ খালেদা জিয়ার জীবনীর ওপর রচিত কয়েকটি গ্রন্থে তার জন্ম বছর ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট দেখানো হয়েছে।
১৫ অগাস্ট খালেদার জন্মদিন উদযাপনের বিষয়ে বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসা নেতা নাজমুল হুদা সপ্তাহখানেক আগে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জোটসঙ্গী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর প্ররোচনায় ১৫ অগাস্ট জন্মদিন উদযাপন করা শুরু করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
“আমি লক্ষ করেছি, যখন চারদলীয় জোট করে জামায়াতকে সঙ্গে নেওয়া হয়, তখন বিএনপির রাজনীতিতে হঠাৎ করে ১৫ অগাস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করা শুরু হয়।”
“জামায়াতকে সাথে নিয়ে জোট গঠন করে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থেকে আগস্ট মাসে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলছিল। সেটাকে স্তব্ধ করার জন্যই ১৫ অগাস্ট জন্মদিন পালন নামক নাটকের অবতারণা করেছিলেন খালেদা জিয়া।”
আওয়ামী লীগ নেতারা রাজনৈতিক নানা আলোচনায় এমনকি শেখ হাসিনা তিন বছর আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময়ও ১৫ অগাস্ট শোকের দিন কেক না কাটার আহ্বান জানিয়েছিলেন। গত ৪ আগস্ট কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীও খালেদার সঙ্গে বৈঠকেও তাকে ১৫ আগস্ট কেক না কাটার অনুরোধ করেন।
বিএনপির রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বানের জবাবে ১৫ অগাস্ট কেক না কাটাও অন্যতম শর্ত হিসেবে দিয়ে আসছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
এর মধ্যে গত বছর প্রথম প্রহরে খালেদা জিয়া কেক না কাটলেও ১৫ অগাস্ট সন্ধ্যার পর কেক কেটে ঠিকই জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন।
শায়রুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত যতটুকু জানি, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সোমবার ১৫ আগস্ট কেক কাটার কোনো অনুষ্ঠান নেই। ম্যাডাম প্রতিদিনের মতো কালকেও কার্যালয়ে আসার কথা রয়েছে।”
এবার জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান সরকার প্রত্যাখ্যান করার পর বিএনপি সমর্থক অন্যতম পেশাজীবী নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীও কেক না কাটতে খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
কেক কাটার বিষয়ে গয়েশ্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার নেত্রী নিজে থেকে নন, সমর্থকদের চাপে কেক কাটেন।
“বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। তার লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী-সমর্থক-ভক্ত রয়েছে। এটা তাদের অনুভূতির ব্যাপার। বেগম জিয়া নিজে থেকে কখনও জন্মদিন পালন করেন না।”
খালেদার বাবা এস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী হলেও তিনি দিনাজপুরে ঠিকানা নিয়েছিলেন। খালেদার জন্মও সেখানে। তার মায়ের নাম তৈয়বা মজুমদার।
সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ১৯৬০ সালে খালেদার বিয়ে হয়। পঁচাত্তরে পটপরিবর্তনের পর প্রথমে সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরে রাষ্ট্রপতি হন জিয়া।
১৯৮১ সালে ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জিয়া নিহত হলে রাজনীতিতে পা রাখেন খালেদা। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং তিন বছর পর চেয়ারপারসন হন তিনি।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া দল’ বিএনপির জনভিত্তি তৈরি করে দেন খালেদাই।
১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর কয়েক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়ী হলে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে হারের পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এখন সংসদের বাইরে থাকলেও রাজনীতিতে তার গুরুত্ব কমতে দেখা যায়নি।