ক্রীড়া ডেস্কঃ
আসরে প্রথমবার শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়ে জোড়া গোলে আলো ছড়ালেন কাসপের ডলবার্গ। উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে ওয়েলসকে উড়িয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল ডেনমার্ক।
আমস্টারডামের ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনায় শনিবার শেষ ষোলোর ম্যাচে ৪-০ গোলে জিতেছে ১৯৯২ আসরের চ্যাম্পিয়নরা। ডলবার্গের জোড়া গোলের পর শেষ দিকে ব্যবধান বাড়ান ইওয়াখিম মেইল ও মার্টিন ব্র্যাথওয়েট।
২০০৪ সালের পর এই প্রথম মহাদেশীয় প্রতিযোগিতাটির শেষ আটে পা রাখল ডেনিশরা।
বলের দখল কিংবা আক্রমণ, ম্যাচে সব দিক থেকেই এগিয়ে ছিল ডেনমার্ক। গোলের উদ্দেশে ১৬টি শট নেয় তারা। ৮টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে ওয়েলসের ১১ শটের কেবল একটি লক্ষ্যে ছিল। তাদের সেরা তারকা গ্যারেথ বেল ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।
শুরুর কয়েক মিনিট ডেনমার্কের ওপর চাপ বাড়ায় ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবে নকআউটে আসা ওয়েলস। নবম মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগ পায় তারা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে বেলের বাঁ পায়ের জোরালো শট পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়।
ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে আক্রমণে ধার বাড়ায় ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ ডেনমার্ক। ২৭তম মিনিটে ডলবার্গের অসাধারণ গোলে এগিয়ে যায় তারা। মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের বাড়ানো বল পেয়ে একজনকে কাটিয়ে মিকেল পাস দেন ডলবার্গকে। জায়গা বানিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ২৩ বছর বয়সী ফুটবলার।
তিন মিনিট পর দ্বিগুণ হতে পারতো ব্যবধান। সতীর্থের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বাঁ দিকের বাইলাইনের কাছ থেকে পাস দেন মিকেল। কাছ থেকে ডলবার্গের ফ্লিক ঠেকান ওয়েলস গোলরক্ষক ড্যানি ওয়ার্ড।
৪৮তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবধান বাড়ায় ডেনমার্ক। ডান দিক দিয়ে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পাস বাড়ান ব্র্যাথওয়েট। ওয়েলস ডিফেন্ডার নেকো উইলিয়ামস ক্লিয়ার করার চেষ্টায় বল তুলে দেন ছয় গজ বক্সের সামনে ডলবার্গের পায়ে। ডান পায়ের শটে বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি ফরাসি ক্লাব নিসের ফরোয়ার্ড।
হেনরিক লারসেনের পর দ্বিতীয় ডেনিশ ফুটবলার হিসেবে ইউরোর নকআউট পর্বের কোনো ম্যাচে দুই গোল করলেন তিনি। ১৯৯২ আসরে সেমি-ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন লারসেন।
বাকি সময়েও আধিপত্য ধরে রাখে ডেনমার্ক। ৬৫তম মিনিটে মাথিয়াস ইয়ানসেনের শট গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়ে পোস্টে লাগে। ৮১তম মিনিটে ডি-বক্সের সামনে থেকে ব্র্যাথওয়েটের ফ্রি কিক উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
৮৬তম মিনিটে বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ডের আরেকটি প্রচেষ্টা লাগে পোস্টে। দুই মিনিট পরই স্কোরলাইন ৩-০ করেন মেইল। সতীর্থের ক্রস ডি-বক্সে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে মেইলকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা ওয়েলসের হ্যারি উইলসন। আর যোগ করা সময়ে বল জালে পাঠিয়ে বড় জয় নিশ্চিত করেন ব্র্যাথওয়েট। প্রথমে অফসাইডের পতাকা তুলেছিলেন লাইন্সম্যান। ভিএআরে পাল্টায় সিদ্ধান্ত। উৎসবে মাতে ডেনমার্ক।
প্রথম দুই ম্যাচ হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কায় পড়েছিল ডেনিশরা। শেষ রাউন্ডে রাশিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে শেষ ষোলোয় জায়গা করে নেয় তারা। আরেকটি দারুণ জয়ে এবার এগিয়ে গেল আরেক ধাপ।
মাঠে না থেকেও যেন ছিলেন ক্রিস্তিয়ান এরিকসেন, সতীর্থদের বাড়তি প্রেরণা হয়ে। ম্যাচের শুরুতে এরিকসেন লেখা বিশাল আকৃতির এক জার্সি প্রদর্শন করা হয়।
কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমার্ধের শেষ দিকে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। মাঠে চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে নেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। তার এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্থম্ভিত হয়েছিল ক্রীড়া বিশ্ব। অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি।
ডেনমার্কের সামনে এবার আরও এগিয়ে যাওয়ার পালা। শেষ আটে আগামী শনিবার নেদারল্যান্ডস অথবা চেক রিপাবলিকের মুখোমুখি হবে তারা।
সূত্রঃ বিডিনিউজ