অনলাইন ডেস্কঃ
আগামী ৮ অগাস্ট থেকে করোনাভাইরাসের টিকা ১৮ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকরাও পেতে যাচ্ছেন।প্রায় ২২ লাখ ১৮ বয়স বয়সী যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র এখনও নেই, তাদের টিকা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “যাদের বয়স ১৮ বছর, তারা এনআইডি দিয়ে ৮ অগাস্ট থেকে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।”
যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র নিয়ে স্থানীয় টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
পলক এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, “এনআইডি ছাড়া প্রায় ২২ লাখ ১৮ বছর বয়সী যারা আছেন, তারা টিকা কেন্দ্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যায়নপত্র দেখাবেন এবং সেখানে টিকা দেওয়ার কার্ড দেওয়ার কথা বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।”
প্রত্যায়নপত্রের বিষয়ে পলক বলেন, “ডিজিটালি সম্ভব না হওয়ায় হার্ড কপি দেওয়ার কথা বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।”
“কেন্দ্রে গিয়ে একটি কার্ডে নাম, ঠিকানা টিকার তারিখ, পরবর্তী টিকার তারিখ উল্লেখ করে নিবন্ধন করবে। কেউ যাতে টিকা থেকে বঞ্চিত না হয় এজন্য কেন্দ্রে গিয়ে এ পদ্ধতির সুপারিশ করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা কার্ড তৈরি করছে।”
বর্তমানে কোভিড-১৯ টিকা নিতে হলে এনআইডি কিংবা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে সরকারের সুরক্ষা অ্যাপে নাম নিবন্ধন করতে হয়। তা পূরণের সময় দেওয়া মোবাইল নম্বরে এসএমএসে টিকাগ্রহণের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়।
এনআইডি নেই যাদের, তাদের তথ্য সুরক্ষা অ্যাপে সংরক্ষণ করা এখনই সম্ভবপর হচ্ছে না জানিয়ে পলক বলেন, “সুরক্ষা অ্যাপে এ সুযোগ নেই। এটি করা হলে ইরোর দেখা যাবে। এ ধরনের যারা টিকা দেবে, তাদের তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রেখে দেবে এবং পরে এটি ইনপুট দেওয়ার উপায় বের করা হবে।”
করোনাভাইরাসের টিকাদানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ এবার ব্যাপকভিত্তিক টিকাদানে নামছে। রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ৭ থেকে ১৪ অগাস্ট প্রায় এক কোটি টিকা দেওয়া হবে।
দিনে ৫০ লাখ নিবন্ধনে হলেও সুরক্ষা সাইটের সক্ষমতা আছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, “সরকারের কাছে টিকা আছে এবং আরও আসছে, সবাই যেন টিকা পান এটি নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
টিকা কেন্দ্রে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আগে নিবন্ধন করতে ২ মিনিট সময় প্রয়োজন হত, এখন তা ৪০ সেকেন্ডে করা সম্ভব হবে।”
“নিবন্ধন করে টিকা নেওয়া হলে ১১ কোটি ১৭ লাখ এনআইডির বিপরীতে যদি একটি হেলথ রেকর্ড রাখা যায়, তাহলে এটি আমাদের জন্য একটি বড় সম্পদ হয়ে দাঁড়াবে,” বলেন তিনি।
ইসিরও উদ্যোগ
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে নতুন ভোটার হলেই সংশ্লিষ্টদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে নামসহ এনআইডি নম্বরটি জানিয়ে দেওয়া হবে।
টিকা পাওয়ার সুবিধার জন্য নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে এ সেবা কাজে লাগবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, “এসএমএসের মাধ্যমে নতুন ভোটারদের এনআইডি নম্বর জানানোর বিষয়টি আগেও ছিল। কারিগরি সমস্যার কারণে কিছু তা বন্ধ ছিল। কোভিড সময়ে টিকা নেওয়ার সুবিধার্থে দ্রুত এ সেবাটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের আইটি টিম বিষয়টির সমাধান করেছে।
২০০৭-২০০৮ সালে দেশে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু হয়। ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়। বর্তমানে ১১ কোটি ১৭ লাখেরও বেশি ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হচ্ছে তালিকায়।
বিশ্বে মহামারী বাঁধিয়ে দেওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষায় টিকার উপরই ভরসা করা হচ্ছে। দেশে সরকার বিনামূল্যে এই টিকা দিচ্ছে।
গত ২৬ জানুয়ারি টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়। তখন শুধু ৪০ বছর বা এর বেশি বয়সীরা নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছিলেন। মাঝে টিকার সঙ্কট চললে বয়সসীমা আর বাড়ানো হয়নি।
নতুন টিকা আসার পর গত ৫ জুলাই আগের চেয়ে আরও পাঁচ বছর কমিয়ে টিকার নিবন্ধনের জন্য যোগ্যদের বয়স ৩৫ বছর করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর ১৯ জুলাই আরও ৫ বছর কমিয়ে ৩০ বছর করা হয়েছিল।
এরপর গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা আসে, বাংলাদেশে যাদের বয়স ২৫ বছর তারা নিবন্ধন করতে পারবেন। ৮ অগাস্ট থেকে বয়সসীমা আরও নামিয়ে ১৮ বছর করা হয়।
সূত্রঃ বিডিনিউজ