অনলাইন ডেস্কঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষের জন্য রক্ত দিয়ে যে ঋণে আবদ্ধ করে গেছেন, সেই ঋণ শোধ করতে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যেই তার সরকার কাজ করে চলেছে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিটিভিতে প্রচারিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি নিবেদিত এ অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণ’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ আজকে সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। জাতির পিতার এই আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যেতে পারে না। তিনি এদেশের মানুষের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন। রক্তের ঋণে আমাদের আবদ্ধ করে গেছেন।
“আমাদের একটাই লক্ষ্য, তার এই রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। বাংলাদেশকে জাতির পিতা ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে সেই আদর্শ নিয়েই আমাদের পথ চলা।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার দুই মেয়ে শেখ হসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
স্বজন হারানোর সেই বেদনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সব হারিয়েছি। আমি জানি, হারানোর বেদনা খুব কষ্টকর। সেই কষ্ট সহ্য করে একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই লক্ষ্য।
“যে দেশের স্বপ্ন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন ইনশাল্লাহ বাস্তবায়িত হবে।”
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ১৫ অগাস্ট নিহত সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, “এ দিনটি (১৫ অগাস্ট) আমাদের জন্য শোকের দিন, কষ্টের দিন। কিন্তু সব থেকে বড় কথা হল, বাঙালি জাতির জন্য সব হারানোর দিন, শোকের দিন।”
শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি স্বাধীনতার পর দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে তার নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও বক্তব্যে তুলে ধরেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়েছেন।এই এত স্বল্প সময়ের মধ্যে একটা বিধ্বস্ত দেশকে যেমন গড়ে তোলা, পাশপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করা। তিনি সেটা খুব সফলভাবে করে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন।
“অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, সেটা যদি বাস্তবায়ন করে যেতে পারতেন, তাহলে বাংলার মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারত। ক্ষুধা, দারিদ্র থেকে উন্নত জীবন পেতে পারত।”
কিন্তু খুনিরা যে তা হতে দেয়নি, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা স্বাধীনতা চায়নি, যারা বাঙালির বিজয় চায়নি, তারাই নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে। কিছু লোক তো বেঈমানিও করে, মুনাফেকি করে। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্যের।”
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তার দুই মেয়ের দেশে ফেরার পথে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল সে সময় রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারীরা। ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে তার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আর ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার কথা স্মরণ করে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে রেহানার (শেখ রেহানা) কাছে রেখে আমি চলে আসি বাংলাদেশে। আসি একটাই লক্ষ্য নিয়ে, যে আদর্শের জন্য আমার বাবা সংগ্রাম করে গেছেন,যে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য তিনি রক্ত দিয়ে গেছেন, রক্ত দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছেন। সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন, আজ তা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘মর্যাদা’ পেয়েছে, দারিদ্র্যের হার কমে এসেছে।
“আজকে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এ দেশে একটি মানুষও দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত থাকবে না। একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না।”
শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা ভূমিহীন মানুষের জন্য খাস জমি বিতরণ করে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলেন। আমরা তার জন্মশতবার্ষিকীতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। আমরা সেইভাবে গৃহনির্মাণ করে দিচ্ছি ঘরহারা মানুষের। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিয়েছি। শিক্ষার আলো আজকে ঘরে ঘরে পৌছে গেছে।”
বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তারানা হালিম।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ আলোচনায় অংশ নেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ