রুবেল বড়ুয়া:
বৌদ্ধ ধর্মের যাবতীয় ঘটনাবলি পূর্ণিমা নির্ভরশীল।রাজকুমার সিদ্ধার্থরূপে পৃথিবীতে আবির্ভাব, সংসার ত্যাগ, গভীর ধ্যান সাধনা করে বুদ্ধত্ব লাভ, ধর্ম প্রচার থেকে শুরু মহাপরিনির্বাণ লাভ অবধি বিভিন্ন ঘটনাবলি বিভিন্ন পূর্ণিমা তিথিতে সংগঠিত হয়েছে।সে জন্য সকল বৌদ্ধদের কাছে প্রত্যেক পূর্ণিমা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।ঠিক তেমনি মধু পূর্ণিমা বা ভাদ্র পূর্ণিমার গুরুত্ব ও অপরিসীম।
আজ শুভ মধু পূর্ণিমা।বর্ষাবাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমা এটি।সারাবিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা এ পূর্ণিমাকে মহাসমারোহে উদযাপন করেন।বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারতসহ বৌদ্ধ দেশগুলোতে। চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম,
কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশে বেশ উৎসবমুখর ও আনন্দ পরিবেশে পালিত হয় দিনটি।
সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বিভিন্ন পূজার মাধ্যমে এ দিনটি পালন করে। এ দিন বিহারে ভিক্ষুদের মধুদান সহ বিিভন্ন ফলমূল দান করা হয়।কেউ কেউ এ পূর্ণিমাকে ভাদ্র পূর্ণিমা বলেন।তবে সারা বিশ্বে মধু পূর্ণিমা নামে অধিকতর পরিচিত।
কথিত আছে, তথাগত বুদ্ধ কোশাম্বীতে ভিক্ষু-সংঘসহ অবস্থান করার সময় বিনয়ধর পন্থী ভিক্ষু ও সূত্রধর পন্থী ভিক্ষুর মধ্যে বিনয় সম্পর্কিত একটি বিষয় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এ বিষয় নিয়ে উভয় পন্থী ভিক্ষুদের মধ্যে মতদ্বৈততা চরম আকার ধারণ করলে তথাগত বুদ্ধ তাঁদের বিবাদ মীমাংসা করার প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু উভয় পক্ষ তাঁদের স্ব স্ব মতের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন; ফলে বিবাদ মীমাসা করা সম্ভব না হওয়ায় বুদ্ধ কোশাম্বী ত্যাগ করে পারিলেয়্য নামক বনে গমন করেন এবং দশম বর্ষাবাস সেখানে পালন করেন।
পারিলেয়্য বনে বর্ষা যাপন কালে একটি একাচারী হাতি প্রতিদিন বুদ্ধের সেবা করত; বনের ফল সংগ্রহ করে বুদ্ধকে দান করত। এ সময় বনের একটি বনর হস্তীরাজ কর্তৃক বুদ্ধকে সেবা করতে দেখে তারও বুদ্ধকে পূজা করার ইচ্ছা জাগে। ভাদ্র পূর্ণিমাতে সে একটি মৌচাক সংগ্রহ করে বুদ্ধকে দান করে। মৌচাকে মৌমাছির ছানা ও ডিম থাকায় বুদ্ধ প্রথমে মধু পান করলেন না। বানর তা বুঝতে পেরে মৌচাকটি নিয়ে ছানা ও ডিম সযতনে পরিষ্কার করে পুনরায় বুদ্ধকে দান করলে এবার বুদ্ধ মধু পান করেন।
বুদ্ধ তাঁর ধর্ম অভিযানে শুধুমাত্র মানুষের জন্য ধর্ম প্রচার করেননি।পৃথিবীর সকল প্রাণিকূলের জন্য তিনি তাঁর ধর্ম প্রচার করেছেন।তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে সকল প্রাণিকে ভালবাসতে হয়।বুদ্ধ জীবনে আমরা দেখি মানব ও জীবজগতের কল্যাণের জন্য বুদ্ধ তাঁর মঙ্গলময় বাণী ছড়িয়ে দিতে নানা স্থান পরিভ্রমণ করেছেন। গিয়েছেন গভীর অরণ্য,বন, জঙ্গল, পাহাড়, পর্বত, গুহাতেও। বুদ্ধ তাঁর বাণী ছড়িয়ে দিতে কোনো স্থানকে অগ্রাহ্য করেননি।এ থেকে বোঝা যায়, শুধু বিশ্ব মানবজাতির জন্য তাঁর অমৃতময় বাণী প্রচারিত হয়নি, তার বাণীর অমৃতময় পরশ জীবজগতের পশুপাখি, কীট-পতঙ্গ, এমনকি জীবজন্তুও পেয়েছিল অপার করুণা। এজন্যই তিনি সব জীবের শান্তি ও সুখ কামনা করে বলতে পেরেছিলেন- ‘সব্বে সত্তা সুখীতা হোন্তু।’ অর্থাৎ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তিলাভ করুক। সব প্রাণীর সুখের জন্য কী অভূতপূর্ব বাণী-ই না ছড়ালেন!
সবাইকে শুভ মধুপূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা।