সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় রামু উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও সম্পন্ন হল মাত্র মাস-তিনেক আগে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের দুই দফা নির্বাচনে রামু উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। প্রথম দফা ২৮ মে এবং দ্বিতীয় দফা ৪ জুন এই দুই দফায় রামু উপজেলার এগার ইউনিয়নের ভোট হয়। এগার ইউনিয়নের দশটিতে আওয়ামী লীগ এবং একটিতে বিএনপির প্রার্থী জয় লাভ করেন। আমাদের রামু তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সমর্থক বিজয়ী দশ প্রার্থীদের মধ্যে ছয়টিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় লাভ করেছেন। অপর চারটিতে জয় পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীরা। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষনা দিলেও অনেক উপজেলায় দলের বিদ্রোহীদের দমানো যায়নি। রামু উপজেলাতেও এর ব্যতয় হয়নি। বরং রামুর কোন কোন ইউনিয়নে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। রামু উপজেলার আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে থাকার সুবাদে এখানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের যে সহজে দমানো যাবেনা তা বোদ্ধা মহল আগে থেকেই ঠের পেয়েছিলেন। কার্যত সেটাই সত্যি হয়েছে। একথাও সত্য যে জয়ের ক্ষেত্রে বিদ্রোহীরাই এগিয়ে রয়েছেন। তাহলে কি মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ে কোন গলদ ছিল?
তবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এবং নির্বাচনে হেওে যাওয়া প্রার্থীরা অভিযোগ কওে বলেন তাদেরকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। সত্য-মিথ্যা বিজ্ঞ পাঠকের বিচার্য্য।
যাইহোক, দলীয় প্রার্থী এবং বিদ্রোহী মিলে রামুর এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছে জনতার চায়ের টেবিলে এখন আলোচনার বিষযবস্তু হয়েছে এই বিষয়টি সন্দেহ নেই।
নির্বাচনের তিন মাস কাছাকাচি সময়ে গত ১৬ আগস্ট নির্বাচিতরা কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেছেন। এ শপথ মামুলি কোন বিষয় নয়, এটা মূলত দেশ এবং জনসেবার অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। শপথ গ্রহণের পর পর তারা জনপ্রতিনিধির মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছেন। একইসাথে ইউনিয়ন পরিষদের সুযোগ-সুবিধাসহ যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন।
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জনগণের দেওয়া এই ক্ষমতা যেন অন্যায়ভাবে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহ্নত না হয় সেদিকে পূর্ণ সজাগ থাকতে হবে। অনেক সময় বিভিন্ন কৌশল এবং টাকার জোর খাটিয়ে ক্ষমতা লাভ করা যায় কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলও টাকার মতই হয়। আজ আপনার হাতে তো কাল আরেকজনের হাতে। যখন যার হাতে যায় তখন তার হয়ে কাজ করে। ক্ষমতার পুরোটা সময় ধরে জনসেবার ব্রত নিয়ে জনগণের কোন উপকার না করে কিংবা উল্টো জনগণের অধিকাার হরণ করে কেবল ভোটের আগে টাকা বিলিয়ে নির্বাচিত হবার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষ এখন আগের মত অতটা অসচেতন নেই।
মানুষ এখন কে নেতা আর কে নেতা সেজে আছেন এবং কে কথার মানুষ আর কে কাজে মানুষ তা ধরে নিতে পারেন। তাই ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সেবা, সততা এবং দেশপ্রেমের জোওে মানুষের হ্নদয়ে পৌছে যেতে হবে। বিষয়টা এমন যে, মানুষের ভালবাসা জয় করতে পারলে এই সাধারণ মানুষেরাই পকেটের টাকা খরচ করে জিতিয়ে এনে ক্ষমতার গদিতে বসিয়ে দেবেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষ, মতবিরোধ, এমনকি শত্রুতাও সৃষ্টি হতে পারে। ক্সমতার নাগাল পেয়ে কোন জনপ্রতিনিধি যেন প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে না উঠেন এমন প্রত্যাশা রইল।
দলমত নির্বিশেষে রামুর উন্নয়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সমৃদ্ধি লাভে মিলেমিশে সবাই জনকল্যাণে কাজ করে যাবেন এমন পবিত্র প্রত্যাশা আমাদের সকলের। নির্বাচিতদের জন্য আমাদের রামু পরিবারের অভিনন্দনটা গচ্ছিত রইল।