নিজস্ব সংবাদদাতা:
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিডিআর (বিজিবি) দরবার হল পিলখানা ট্টাজেডির ৭বছর পূর্ণ হল আজ।
নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞে সেনাবাহিনী সৌকশ অন্য সদস্যদের সাথে ওইদিন দরবার হলে নিহত হন কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের ভরামুহুরী গ্রামের কৃতি সন্তান শহীদ লে. কর্নেল আবু মুছা মো. আইয়ুব কাইছার।
পিলখানা ট্রাজেডির পর থেকে পরিবার সদস্যরা প্রতিবছরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়ে আসছে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের নামে নাম করণের জন্য। কিন্তু তাদের এই দাবি বারবার উপেক্ষিত থাকছে বলে অভিযোগ করেছেন আইয়ুব কাইছারের বড়ভাই প্রকৌশলী আলহাজ মো.জহুরুল মওলা ও মেঝভাই মো.এনামুল হক।
তাঁরা চকরিয়ার সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকার প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে এ দাবি জানানোর পাশাপাশি নারকীয় এ ঘটনায় দেশ রক্ষায় নিহত সকল সেনাকর্মকর্তা ও সদস্যদের অবদানের কথা স্বরণ করে বিডিআর দরবার হলকে শহীদ যাদুঘর হিসেবে ঘোষনার দাবিও তুলেন। একই সাথে পিলখানা ট্টাডেটিতে নিহত সকল শহীদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সরকারী ভাবে সহযোগিতা করার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তাঁরা।
এদিকে পিলখানা দিবস উপলক্ষে মরহুম আইয়ুব কাউছারের পরিবার তার স্বরণে গ্রামের বাড়িতে নানা ধর্মীয় অনুষ্টানের আয়োজন করেছে। তারমধ্যে এদিন সকালে বাড়িতে খতমে কোরান, মিলাদ মাহফিল, দু:স্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, বিকেলে সামাজিক মসজিদের দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হবে।
চকরিয়ার কৃতি সন্তান প্রয়াত লে.কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের ভাই চকরিয়া সেন্ট্রাল হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.এনামুল হক বলেন, তৎকালিন সেনা প্রধান মঈন উ আহমদের দূরদর্শীতার অভাবে বিডিআর বিদ্রোহে বাংলাদেশের গর্ব ৫৮জন চৌকস উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাসহ ৬০ জনকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এঘটনার পর ৭বছর সময় পেরিয়ে গেলেও স্ত্রী, সন্তান ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা সরকারের কোন ধরণের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা পায়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কর্ণেল আইয়ুব কাইছারকে সেনা বাহিনীর এতবড় পদে পৌছাঁনোর পেছনে পরিবার সদস্যরা (ভাই-বোনের) সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল। কিন্তু মর্মান্তিক এ ঘটনার পর সরকারের তরফ থেকে পরিবারের (ভাই-বোনদের) প্রতি এতটুকু সমবেদনা বা সহমর্মিতা জানানোর প্রয়োজনও মনে করেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল।
জানা গেছে, লে. কর্নেল আবু মুছা মো. আইয়ুব কাইছারের জন্ম কক্সবাজার জেলার চকরিয়া পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের ভরামুহুরী এলাকায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। ওই গ্রামের মরহুম মাওলানা আবদুল খালেকের ৮ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ১৯৬২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার জন্ম। লেখাপড়া শেষে ১৯৮৩ সালের ১০ জুন তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্সকোরে যোগদান করেন। স্বীয় পেশায় অসাধারণ কর্মদক্ষতার কারনে মাত্র ৬বছরে তিনি মেজর পদে পদোন্নতি পান। ২০০৩সালে তিনি লে.কর্ণেল পদে অভিষিক্ত হন। চাকুরী জীবনে তিনি শান্তি মিশনে কুয়েত, মালয়েশিয়া, সৌদিআরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছিলেন। সর্বশেষ ২০০৯সালে তিনি বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় রক্ষানাবেক্ষন ও নির্মাণ শাখায় (একিউএমজি) পদে কর্মরত ছিলেন।
পারিবারিক সুত্র জানায়, বর্তমানে শহীদ লে.কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের স্ত্রী মুশরাত জাহান পিনু তাদের দুই মেয়ে কারিশা মুশরাত ও জাফারিয়া কাইছারকে নিয়ে ঢাকায় সরকারিভাবে বরাদ্ধপ্রাপ্ত বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।
লে.কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের পরিবার সদস্যরা জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে তার নামে নাম করণের দাবি জানানোর পাশাপাশি আমরা চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানাচ্ছি, চকরিয়া জনপদে লে.কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের স্মৃতি রক্ষার্থে তার নামে পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের সবুজবাগ-থানা সেন্টার সড়কটি সহসা প্রতিবন্ধকতামুক্ত করে তার নামে নাম করণের জন্য। সড়কটি চালু করা গেলে পৌরসভার কয়েক হাজার বাসিন্দা যেমন চলাচলে সুফল পাবে, তেমনকি কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের একটি স্মৃতি অন্তত পক্ষে জন্মভুমিতে প্রতিষ্টা পাবে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক ভুমিকা প্রত্যাশা করেন পরিবার সদস্যরা।
জানতে চাইলে চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামীলীগ মনোনীত একক মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী বলেন, ইনশাল্লাহ জনরায়ে আমি চকরিয়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হলে, দায়িত্ব নেয়ার পর উদ্যোগ নেওয়া হবে সবুগবাগ-থানা সেন্টার সড়কটি প্রতিবন্ধকতা মুক্ত করতে। তিনি বলেন, লে. কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের মতো একজন বড় মাপের মানুষের স্মৃতি অবশ্যই নিজের জন্মভুমিতে থাকা দরকার। পরিবারের দাবি নয়, পৌরসভার একটি সৃজনশীল কাজ হিসেবে আমি সেই কাজটি করবো।