ইমরান হোসাইন:
দেশ মাতৃকার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে যে বীর সূর্য সন্তানরা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন তারা শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাঙালি জাতির শত বছরের পরাধীনতার শিকল ভেঙে শত আকাংক্ষার স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে আমরা বুক ফুলিয়ে গর্বের সাথে বসবাস করছি বাংলাদেশে। যাদের রক্তের ধারায় আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি পেয়েছি, তাঁরা তাদের স্বাধীন করা রাষ্ট্রের বুকে কেমন আছেন, কীভাবে দিন যাপন করছেন, আমরা তাদের কতটুকু খোঁজ খবর রেখেছি, একটু কি ভেবে দেখেছি? যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনের মায়া-মমতা ভুলে দেশ ও জাতির জন্য জীবনকে উৎসর্গ কওে মৃত্যুর ভয়কে পিছু ঠেলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এমনকি দেশের তরে ৩০লাখ বাঙালি শহীদ হলো, আর ভাগ্যক্রমে যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তার স্বাধীন করা রাষ্ট্রের বুকে বেঁচে আছেন। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কি আমরা সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছি, স্বাধীনতার ৪৫বছর পর আজও বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে দেখা যায় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্ধাহারে অনাহারে দিন যাপন করছেন, কোথাও কোথাও দেখা যায় অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধারা অর্থের অভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না।
তেমনি এত অভাগা মুক্তিযোদ্ধা পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর মেহেরনামা এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের পুত্র এস.এম আবু বক্কর ছিদ্দিক। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মহান স্বাধীনতায় নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করেছেন।
যুদ্ধকালীন ২২নং গ্রুপ(১নং সেক্টর চট্টগ্রাম) এর অধীনে যুদ্ধ করে এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা। যার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ১৮৮০১০, গেজেট নং ৩০৬। বতর্মানে পেকুয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর জাতীয় ভাবে নির্বাচিত দপ্তর ও পাঠাগার সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এ মানুষটির আজ করুণ অবস্থা। পিত্ততলীতে ক্যান্সারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অথচ ঠিকমত চিকিৎসাও পাচ্ছেন না তিনি। বতর্মানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ডাঃ মাজাহারুল হক নাসিমের অধীনে ২৭নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। টাকার অভাবে ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার। হাসপাতালের একটি রোগীর সিটও জুটলনা তাঁর। তাই ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
এক ছেলের আয়ের উপর নির্ভরশীল পরিবারে আর্থিক অভাব অনটনে ঠিকমত চিকিৎসা হচ্ছেনা, খাওয়াতে পারছেনা ঔষুধ। তার এ করুণ অবস্থায় স্ত্রী সন্তানদের কান্না করা ছাড়া উপায় নেই।
অপরদিকে স্বামীর এ করুণ অবস্থা দেখে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন স্ত্রী খালেদা বেগম। তারও জুরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা দরকার।
অথচ এ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে দেখার কেউ নাই। স্বাধীন বাংলাদেশের এ বীর মুক্তিযোদ্ধা লোভ, অহংকার ছাড়া সাদাসিদে জীবন যাপন করেছেন। তিনি বলতেন দেশ স্বাধীন করে ফেলেছি। আমার একটা পরিবার চালাতে পারবো না? মহান আল্লাহ আছেন। আর সাথে রয়েছে স্বাধীন বাংলার মানুষ। অথচ তার এ কথা মিথ্যা হতে চলেছে।
দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে পড়ে থাকলেও তার খবর কেউ নিচ্ছেনা। সহযোগিতার হাতও কেউ বাড়িয়ে দিচ্ছেনা। মহান আল্লাহ সহায় হলে হ্নদয়বান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে তিনি আবারো স্বাভাবিক ভাবে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আসবেন। তাই আসুন আমরা সবাই তার প্রতি সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিই।
চট্টগ্রাম সেনানিবাসে চাকরিরত তার ছেলে সোলতান মাহমুদ জানান, পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। জীবনে যা আয় করেছেন তা আমি, বোন ও সংসারের পিছনে ব্যায় করেছেন। চাকরিতে যা আয় তা দিয়ে এতদিন চলছিল চিকিৎসা সেবা, সংসার খরচ, মায়ের চিকিৎসা ও বোনের লেখাপড়া। কিন্তু বর্তমানে বাবার চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছি। আর্থিক অভাব এতোই বেশি যে, বোনের লেখাপাড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। চিকিৎসা করাতে পারছিনা মায়ের। একার পক্ষে কোনভাবে বাবার সুচিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তাই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সরকারি আমলা ও পেকুয়াবাসীসহ সকল হ্নদয়বান ব্যক্তির আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি আমি ও আমার পরিবার।
মুক্তিযোদ্ধার আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে সুলতান মাহমুদ। মোবাইল নং- ০১৮১২৪৪৯৫১৭(বিকাশ)। পেকুয়া শাখার ইসলামী ব্যাংক সঞ্চয় হিসাব নং-৭৯।