বয়স হয়েছে মাত্র কুড়ি বছর। অথচ এত অল্প বয়সেই জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সদস্য আনুচিং মগিনি। জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ে ফুটবল খেলাই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ প্রথম আলোকে আনুচিং জানিয়েছেন, ‘আমি খেলা ছেড়ে দিয়েছি। আর ফুটবল খেলব না।’
জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে গতকাল অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এই ফরোয়ার্ডকে। এরপর খাগড়াছড়িতে নিজের বাড়ি ফিরে গেছেন আনুচিং। সেখান থেকে আজ জানিয়েছেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কোনো ম্যাচ খেলতে না পারা এবং ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার হতাশা থেকেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত।
মেয়েদের জাতীয় দলের কোচ গোলাম রব্বানী অবশ্য আনুচিংয়ের বাদ পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘আনুচিংকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি পারফরম্যান্সের অবনতির কারণে। তবে যারাই এভাবে বাদ পড়ে তাদের বলে দেওয়া হয়, ভালো খেলে তুমি আবারও ফিরতে পারবে। এর আগে মারিয়া মান্দাও বাদ পড়েছিল ২০১৫ সালে। পরের বছর ফিরে এসে সে বয়সভিত্তিক সাফ জিতিয়েছে বাংলাদেশকে।’
আনুচিং মূলত যে পজিশনে খেলেন জাতীয় দলে সেখানে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কৃষ্ণা রানি সরকার, সিরাত জাহান, শামসুন্নাহার জুনিয়রদের সঙ্গে লড়াই করে তাই একাদশে সব সময় সুযোগ পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে আনুচিংয়ের জন্য। নেপালে গত বছর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সাফে তাই দলে থাকলেও একটি ম্যাচেও মাঠে নামতে পারেননি।
সর্বশেষ মেয়েদের লিগে সর্বোচ্চ গোল করা আকলিমা খাতুন জাতীয় দলে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছেন। ২০২১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন শাহেদা আক্তার। জাতীয় দলে ঢোকার অপেক্ষায় আছেন তিনিও। পারফরম্যান্স ছাড়া তাই জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া যে কঠিন হতে পারে সেটাই বললেন গোলাম রব্বানী, ‘এখানে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতা করতে হবে। পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। বয়সভিত্তিক দল থেকে সিনিয়র দলে ওর পজিশনে আরও অনেক ভালো মানের খেলোয়াড় আছে। তাদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে, খেলায় উন্নতি করতে না পারলে তো জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে।’
জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলেন দুই যমজ বোন, যাদের মধ্যে আড়াই মিনিটের ছোট আনুচিং মগিনি। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফুটবল দিয়ে আনুচিং ও আনাই ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা দলের হয়ে খেলেছিলেন আনুচিং। ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবলে খেলেন নিজের জেলা খাগড়াছড়ির হয়ে। ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত সাফে প্রথমবার জাতীয় দলে সুযোগ পান। এরপর বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দলের হয়ে এএফসি, সাফ, এশিয়া কাপ, জকি কাপ, ও আন্তর্জাতিক প্রীতি টুর্নামেন্টে খেলেছেন আনুচিং। ২০১৮ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলেও খেলেছেন আনুচিং। ঘরোয়া ফুটবলে খেলেছেন নাসরিন স্পোর্টিং ক্লাব, আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব ও বসুন্ধরা কিংসের হয়ে।
সূত্র : প্রথম আলো