রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতে ভরপুর মাস রমজান। মুমিনরা এ মাসকে সাদরে গ্রহণ করতে অধীর আগ্রহে থাকেন। প্রথম দিন থেকেই শুরু করেন যাবতীয় নেক কাজ এবং বিরত থাকেন পাপ থেকে। তাই পরিশ্রমী এসব মুত্তাকি বান্দাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা পবিত্র রমজান মাসে নেক কাজে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। মুমিন-মুত্তাকিরা কখনও তা ছাড়তে পারেন না। শত কষ্টের পরও দীর্ঘ এক মাস পানাহার থেকে সংযমী হয়ে রোজা রাখতে মোটেও দ্বিধা করেন না। আর তা করেন মহান প্রভুর সন্তুষ্টি পেতে। সে জন্যই এসব বান্দাদের পুরস্কৃত করবেন স্বয়ং আল্লাহ নিজেই। যার প্রমাণ পাওয়া যায় হাদিসে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত— রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেছেন— সাওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য। কিন্তু সিয়াম আমার জন্য। তাই আমি নিজে এর প্রতিদান দেবো। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার। যার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ! অবশ্যই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের চেয়েও সুগন্ধি। রোজাদারের জন্য রয়েছে দু’টি খুশি; যা তাকে খুশি করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ১৯০৪)
সেন্ড মানি
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনও ব্যক্তি তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে সদকার সওয়াব পাবে।’ (সহিহ বুখারী: হাদিস ৪০০৬)। নগদ ইসলামিক থেকে খুব সহজেই যে কোনও সময় যে কোনও নম্বরে, প্রিয়জনকে টাকা পাঠিয়ে দিন কোনও চার্জ ছাড়াই।
বান্দা অন্যান্য মাসের প্রতিটি কাজের সওয়াব স্বরূপ ১০ থেকে ৭শ’ গুণ বেশি পেয়ে থাকেন। রমজান মাসে তা কমানো তো হয়েই না, বরং তা বাড়িয়ে কতগুণ করেছেন তা মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। কেননা, রমজানের রোজাসহ সকল ইবাদত প্রভুর জন্যই এবং তিনিই তার সর্বোচ্চ প্রতিদান দেবেন। হাদিসের ভাষায়, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত— রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আদম-সন্তানের প্রতিটি কাজের সওয়াব ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তবে রোযা ব্যতীত। কেননা তা শুধু আমার জন্য এবং আমিই তার পুরস্কার দেবো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮২৩)
তাই সে সুযোগ কাজে লাগাতেও ইমানদাররা পিছপা হন না। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনানুয়ী— এই মাসে দান-সদকা করা হয়ে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান করতে তাগিদ করেছেন।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত— রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যান্য লোকদের তুলনায় অত্যাধিক দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। রমজান মাসে যখন জিবরাঈল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি অত্যাধিক দানশীল হয়ে যেতেন। আর জিবরাঈল (আ.) রমাজানের প্রত্যেক রাতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাকে কোরআন শিক্ষা দিতেন।’
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যখন জিবরাঈল (আ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি প্রবাহমান বায়ু অপেক্ষাও অত্যধিক দানশীল হতেন। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ২০৯৫)
রমজান মাসে দানের ফলে গরিব-মিসকিনরা বিত্তশালীদের মতো যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পূর্ণাঙ্গ ইবাদতের মাধ্যমে রমজান কাটাতে পারবেন এবং বিত্তশালীদের অনুদান দিয়ে রমজান পরবর্তী ঈদে আসবে সমতা।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে; তারাই সফলকাম। মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এ আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৩৮-৩৯)
সৌজন্যে : বাংলা ট্রিবিউন