ঈদুল ফিতর ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের অন্তত ‘হাফ ডজন’ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১৯ এপ্রিল) ধানমন্ডির নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের এক যৌথ সভার পরে নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে এসব নির্দেশনা দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, ঢাকা মহানগর শাখা ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যৌথসভা করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীকে ভিডিও কল দেওয়ার জন্য দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে বলেন ওবায়দুল কাদের। পরে ভিডিও কলে নেতাদের সঙ্গে ৭-৮ মিনিট কথা বলেন শেখ হাসিনা।
যৌথ সভায় অংশ নেওয়া একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতর ও আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এই অল্প সময়ের কথায় নেতাদের ৫-৬টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এরমধ্যে রয়েছে— বিরোধীদের সম্ভাব্য নাশকতার ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকা, ঈদের ছুটিতে নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করা, সরকারি প্রকল্পের উপকারভোগীদের খোঁজখবর এবং সরকারের উন্নয়নের চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরা, বিএনপির অপশাসন ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা এবং তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সময়ের তুলনা করে মানুষকে বোঝানো, স্থানীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের গ্রুপিং না করা এবং যাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে— তার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা, কৃষকদের ধান কাটার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং উৎপাদন বাড়াতে অনাবাদি জমি না রাখতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘যৌথ সভায় আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন। নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই কাজ করবেন।’
আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে জনসংযোগের পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের উপকারভোগীদের খোঁজ-খবর নিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর বাইরেও কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন।’
সভার সূত্র জানায়, ঈদের সময় গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে বিএনপি আমলের অপশাসন, দুর্নীতির চিত্র এবং পার্থক্য মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য বলেন তিনি।
সভায় অংশ নেওয়া একজন নেতা জানান, দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এলাকায় কোনও গ্রুপিং দ্বন্দ্ব করা যাবে না। সবাইকে দলের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। যারা এলাকায় কাজ করতে চান, একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনও ধরনের দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা করা যাবে না।
কৃষকদের ধান কাটার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা এবং সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। যার যার এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি এলাকায় কোনও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকলে খোঁজ নিতে হবে, তাদেরও ঘর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া অনাবাদি জমি আবাদে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
সূত্রমতে, দলীয় নেতাকর্মীদের সাদাসিধা জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, সাদাসিধা জীবনযাপন করতে হবে। মানুষের সঙ্গে মিশে থাকতে হবে, তাদের কথা চিন্তা করতে হবে।
সম্প্রতি মার্কেটে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা নাশকতা করবে, তাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। কোনও ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে নাশকতা করতে না পারে—সে ব্যাপারেও দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, সভায় অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গেও কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এ সময় সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। তারা দলীয় প্রধানকে জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। ঈদের দুই-একদিন পরে কমিটি দেওয়া হবে।
পরে ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতাদের সতর্কভাবে চলাফেরা করার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। বিশেষ করে তাদের মোটরসাইকেল চলানোর সময় সতর্কতা অবলম্বনের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন