ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতালাভের পর গত ৭৫ বছরে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। ২০২১ সালের শেষার্ধ থেকে দেশটিতে এই সংকটের আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল, ২০২২ সালের শুরু থেকে তা তীব্র হয়ে উঠতে থাকে।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে ওঠে যে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে, যিনি বর্তমানে একই সঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও অর্থমন্ত্রী— দুই পদের দায়িত্ব পালন করছেন।
মূলত ডলারের মজুত তলানিতে ঠেকার কারণেই এই সংকট শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু কী কারণে কমল ডলারের মজুত— সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য এখনও তেমনভাবে পাওয়া যায়নি। সাবেক রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের ঘনিষ্টদের মতে— করোনা মহামারি ও তার জেরে শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ খাত পর্যটনে অচলাবস্থাই জাতীয় অর্থনীতির এ সংকটের জন্য দায়ী।
তবে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে ভিন্ন কথা। বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বেশ কিছু সহজাত দুর্বলতা’ ও ‘নীতিগত ত্রুটি’ শ্রীলঙ্কাকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। ঠিক কী কী ‘সহজাত দুর্বলতা’ ও ‘নীতিগত ত্রুটি’র কারণে শ্রীলঙ্কায় এই সংকট শুরু হয়েছে— সে সম্পর্কে অবশ্য বিস্তারিত কিছু বলেনি বিবিসি।
তবে জাতীয় অর্থনীতি নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির যে গতি, তাতে ২০২৪ সালেই দেশের অর্থনীতি পুনরায় প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
‘চলতি বছর আরও ২ শতাংশ সংকুচিত হবে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে— আগামী ২০২৪ সালে অর্থনীতির বৃদ্ধি ঘটবে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ,’ প্রতিবেদনে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই অনুমান বা পূর্বাভাস আইএমএফের অনুমানের চেয়ে বেশ আশাবাদী। আইএমএফের পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতি প্রায় ৩ শতাংশ সংকুচিত হবে এবং আগামী বছর তা বৃদ্ধি পাবে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে। সে সময় ৭০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখেছিল দেশটির লোকজন। ২০২২ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির সংকোচন ঘটেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, যা স্বাধীনতালাভের পর গত ৭৫ বছরে রীতিমতো অভূতপূর্ব।
ওই বছরের জুন মাসে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা এবং তারপর আন্তর্জাতিক ঋণপ্রাপ্তি আরও কঠিন হয়ে ওঠে দেশটির জন্য।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ অবশ্য গত মাসে শ্রীলঙ্কাকে ৩০০ কোটি ডলার জরুরি ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় দেনাদার দুই দেশ চীন ও ভারত দেশটির সরকারের ঋণ পুনর্গঠন প্রস্তাব অনুমোদন করেছে এবং ঋণ পরিশোধের জন্য কলম্বোকে আরও সময় দিয়েছে।
চীনের কাছে শ্রীলঙ্কার দেনা প্রায় ৭০০ কোটি ডলার; আর ভারতের কাছে দেনা ১০০ কোটি ডলার।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট