অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় জানমাল রক্ষায় কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো শনিবার সকালে খুলে দেওয়া হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যে দেশের সব সমুদ্র বন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অতি প্রবল এ ঘূর্ণিঝড় কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন্স দ্বীপসহ মিয়ানমারের উপকূল এবং এর আশেপাশের উপর দিয়ে বয়ে যাবে বলেও আবহাওয়া বার্তা বলা হয়।
দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কক্সবাজারের প্রশাসন ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকে জেলার সব সাইক্লোন শেল্টার খুলে দেওয়া হবে। সন্ধ্যার পর থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারবেন। জেলায় সিসিপির ৮ হাজার ৬০০ জন এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে।
“রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঝুঁকিতে রয়েছে; সেখানেও ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জন্য বলা হয়েছে।
“সেন্টমার্টিনে নেভি, কোস্ট গার্ড, পুলিশসহ অন্যদের মিলিয়ে ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছে। তাই সেখানে সরকারি স্থাপনাগুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে।”
শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত চলা ওই সভায় জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী সহযোগিতা করবে। তারা তাদের স্থাপনা এবং ওষুধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।”
জরুরি যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় রাস্তায় গাছপালা পড়ে থাকলে সেগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য বনবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ২৫ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে; যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ৫.৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩.৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩.৪ মেট্রিক টন শুকনা কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।
সভায় আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এ সময় ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে। সংকেত আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনের দুই দিক থেকে যেহেতু খোলা রয়েছে এবং পানি চলাচলের সুবিধা আছে, যেহেতু বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতি মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মোখার সকল আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।
সভায় জানানো হয়, জেলায় যে ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেগুলোতে ৫ লাখ ৫৯৯০ জন লোক রাখা যাবে। এ ছাড়া ১৩ মে শনিবার সকাল থেকে মেডিকেল দল, কোস্ট গার্ড, নৌ-বাহিনী, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল, স্কাউট দল, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্হাগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোালা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবাইল নম্বর: ০১৮৭২৬১৫১৩২।
সভায় বাাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন মেজর ফাহাদ। তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে আমরা ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থা এবং প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব। এ সংক্রান্ত আমাদের যোগাযোগ সেল খোলা হয়েছে। আমরা আমাদের টিমের সাথে যোগাযোগ রাখব এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সকল ধরনের ইকুইপমেন্ট প্রস্তুত রয়েছে।”
সভায় পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, “প্রতিটি থানায় আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। দুর্যোগকালীন লোকজনকে সহায়তা এবং সহযোগিতা করতে হবে। লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে।”
সভায় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান, ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ খান খলিলুর রহমান ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলের সাড়ে আটশ কিলোমিটারের মধ্যে হাজির হওয়ায় জারি করা হয়েছে মহাবিপদ সংকেত।
আবহাওয়া অফিস শুক্রবার রাত ৯টার বুলেটিনে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ এই মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরকে আগের মতই ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সূত্র : বিডিনিউজ