‘সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার: শিশু শ্রমের অবসান ঘটান! প্রতিপাদ্য’ এ বিএটিবি লামা লিফ ডিপোর উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়েছে। এসময় কৃষিকাজে শিশুশ্রম প্রতিরোধে ৫ জন সফল বাবা-মাকে পুরষ্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএটিবি রিজিওনাল লিপ ম্যানাজার দেওয়ান আমিনুল ইসলাম নাসিম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল।
অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার বর্মণ, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার তবিদুর রহমান, চট্টগ্রাম সাউথ লিফ রিজিওন এরিয়া লিফ ম্যানেজার মো: আল-আমিন, লামা লিফ ডিপো ম্যানেজার তানজিম মাশরুর সহ প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, শিশুশ্রম শিশুর জীবনে এক অমানবিক অধ্যায়। শিশুরা কর্মে নিয়োজিত হওয়ার পরিণাম হয়তো তাৎক্ষণিক লাভ, কিন্তু এর সুদূর প্রসারী প্রভাব রয়েছে। কেননা শিশুশ্রম শিশুর শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক, সামাজিক ও নৈতিক জীবনকেও বিষিয়ে তোলে। শিশুশ্রম শিশুস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক।
এতে তাদের স্বাস্থ্যহানি, অপুষ্টি, বিভিন্ন রোগ- ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া এমনকী নানা দুর্ঘটনাজনিত কারণে পঙ্গুত্বও বরণ করতে হয়। শিশু শ্রমিকেরা পরিবার এবং স্বাভাবিক সামাজিক পরিবেশ থেকে কর্ম সময়ে বিচ্ছিন্ন থাকে। এতে তাদের সামাজিকীকরণ ত্রুটিপূর্ণ ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এরূপ অবস্থায় তাদের ভবিষ্যতে বিভিন্ন বিচ্যুত আচরণ, অপরাধপ্রবণতা ও মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা- দেখা দেয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এর ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তি বাড়ে। শিশু শ্রমিকেরা প্রধানত দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। এরা শ্রমদান কাজে নিয়োজিত হতে গিয়ে শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
এর ফলে ভবিষ্যতে ত্রুটিপূর্ণ শ্রমশক্তি হিসেবে তারা গঠিত হয় এবং দরিদ্র অবস্থায় জীবনযাপনের সম্ভাবনা বাড়ে। শিশুশ্রম জাতীয় অর্থনীতিকে নানাভাবে সংকটাপন্ন করে। এতে বেকারত্ব সৃষ্টি হয় এবং অসম বণ্টন ব্যবস্থার প্রসার হয়। নিম্ন আয়ভুক্ত বা দরিদ্র পরিবারে শিশু শ্রমিকদের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধি পায় বলে বাবা-মা অধিক সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত হয়। পরিণামে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হয় । সুতরাং এসব অবস্থার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, সমাজজীবনে ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুশ্রমের অনেক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তাই শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা অনিবার্য। শিশুশ্রম প্রতিরোধ এবং শিশু অধিকার সংরক্ষণে বাংলাদেশের সংবিধানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এছাড়া আইএলওর সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমাদের শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ১৯৯০-এর সমর্থনকারি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বদ্ধপরিকর। আমাদেরও উচিত হবে শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা অনুধাবন করে শিশুশ্রমকে না বলা। শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন ও সর্বাঙ্গীন বিকাশের লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ করে তার যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা।