কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্য আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে ঠাঁই পেয়েছে। বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতকে খন্ডিত করার প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালান চক্রের তৎপরতা সহ তথ্যবহুল এ বক্তব্য দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়েছে। ভারতের বহুল প্রচারিত আনন্দবাজার, হিন্দুস্থান টাইমস ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যতম দৈনিক প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংসদ সদস্য কমলের এ বক্তব্যের নানাদিক নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ওই বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে এমপি কমল বলেন ‘খালেদা জিয়া দুইবার ক্ষমতায় এসেছিলেন। একবার ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত, আরেকবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। দুইবারই আমরা দেখেছি, একবার কক্সবাজারে ছয় ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। আরেকবার ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম থেকে। ভারতের প্রেসক্লাবের ৪৫ জন সাংবাদিক আমার কক্সবাজার সফরে এসেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, আমরা কক্সবাজার দেখে যে বিষয়টুকু দেখেছি, ভারতের দিনদর্পণ ও আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছে, মনে হয়েছে ছয় ট্রাক অস্ত্র এখন অতীত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়েছে।’ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘আমি কোনো দেশকে দায়ি করতে চাই না। অস্ত্র ব্যবসায়িরা আজকে এই এলাকায় তাকিয়ে আছে। আমি রাজনীতিবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে যতটুকু বুঝি, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যাটেল ওয়ার, ব্যাটেল ফিল্ড হচ্ছে এখন বাংলাদেশ। এখান থেকে ভারত তারা ভাঙতে চায়। এখান থেকে তিব্বতে তারা অস্ত্র পাঠাতে চায়, মিয়ানমারে অস্ত্র পাঠাতে চায়। শেখ হাসিনা বেঁচে থাকতে ভারত ভাঙতে দেওয়া হবে না। যে ভারত আমাদের সাথে ছিল দুঃসময়ে, ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময়। আমরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কবর পশ্চিমবঙ্গে রেখে এসেছি, তাদের (ভারত) অনেক সৈন্যের কবর এ দেশে রয়েছে। একসঙ্গে মিলে আমরা কাঁধে কাঁধ রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। সেই ভারত ভাঙতে শেখ হাসিনার কোনো কর্মী এখানে কাউকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না।’
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ভারত বিরোধী কোনও শক্তিকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এ কথা বলেছেন সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি কক্সবাজার-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ। বাংলাদেশে নির্বাচন আসন্ন। তার আগে কমলের এই মন্তব্যে বিরোধী দলের প্রতি হুঁশিয়ারির স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কমল বলেন, “বাংলাদেশের বৃদ্ধির পিছনে শুধুমাত্র শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। যাঁরা উচ্চবিলাসী বাজেট বলে বার বার কটাক্ষ করেছেন, তারাই এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। তারাই ১৯৭৫-এর পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের আশ্রয়দাতা। তারা আবার বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে শুরু করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়িরা আজ এই দেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে এটুকু বুঝতে পারছি বিশ্বের সবচেয়ে যুদ্ধক্ষেত্র এখন বাংলাদেশ। এ দেশ থেকে বিদেশি শক্তি ভারত ভাঙার পরিকল্পনা করতে চাইছে। এই দেশ থেকে তিব্বতে তারা অস্ত্র পাঠাতে চায়। আওয়ামি লিগের কর্মীরা থাকতে ভারত ভাঙতে দেওয়া হবে না।’’
ভারতের হিন্দুস্থান টাইমস এর বাংলা সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- সম্প্রতি মোদীর আমেরিকা সফরকালেই ‘ভারত ভাগ’ হওয়ার ‘আশঙ্কা’ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এদিকে এই আমেরিকাই কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে সেদেশের সরকারকে ‘হুঁশিয়ার’ করেছিল। এরই মাঝে এবার বাংলাদেশি সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল এক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন। তিনি দাবি করলেন, ‘ভারত বিরোধী কোনও শক্তিকে বাংলাদেশে সরকার গড়তে দেওয়া হবে না।’ স্বভাবতই তিনি সেদেশের বিরোধী বিএনপি-কে আক্রমণ শানিয়েছেন এই মন্তব্যের মাধ্যমে। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘আওয়ামি লিগের কর্মীরা থাকতে ভারত ভাঙতে দেওয়া হবে না।’
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বেও জাতীয় সংসদে এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের দেয়া বেশ কয়েকটি বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলো। তৎমধ্যে একটি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি জাতীয় সংসদের অন্যতম শ্রেষ্ট বক্তার স্বীকৃতি সনদ পেয়েছিলেন স্পিকারের কাছ থেকে। এছাড়াও এমপি কমল জাতীয় সংসদে দেয়া আরও একটি বক্তব্যে নিজ আসনের সবকটি গ্রামের নাম উল্লেখ করে সারাদেশে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন।