হলো না। সিরিজটা হেরেই গেল বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৭৭ রানের জবাবে সফরকারী ইংল্যান্ড জয় নিশ্চিত করে ৪৭.৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে। ৪ উইকেটের এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজটাও জিতে নিয়েছে সফরকারীরা। তাতে টানা ছয় সিরিজ জিতে উড়তে থাকা বাংলাদেশ ২০১৫ সালের পর হারলো কোনও সিরিজ।খবর বাংলাট্রিবিউনের।
স্লিপে দাঁড়িয়ে ইমরুল কায়েস। তাসকিন আহমেদের বল ক্রিস ওকসের ব্যাটের কানায় লেগে উড়ে এলো তার দিকে। দুহাত এক করে তালুবন্দিও করলেন, কিন্তু ধরে রাখতে পারলেন না। পড়ে যাওয়া বল আরও একবার হাতে আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ ইমরুল। হাত ফসকে যাওয়া বলের সঙ্গে ম্যাচটাও ফসকে গেল বাংলাদেশের হাত থেকে। ওই ক্যাচটা ধরতে পারলে যে বাংলাদেশ জিততো তা নয়, তবে ইংলিশদের চাপে রাখা যেত আরও। তখনও যে ২০ বলে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ২১ রান। তা ছাড়া সফরকারীরা হারাতো সপ্তম উইকেট। জীবন পেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা এই অলরাউন্ডারের (১৮ বলে ২৭*) সঙ্গে ধৈর্য্যশীল ইনিংস খেলে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন বেন স্টোকস। ৪৮ বলে হার না মানা ৪৭ রানের ইনিংস খেলা স্টোকস জিতেছেন সিরিজ সেরার পুরস্কারও।
শেষ দিকে মাশরাফি বিন মতুর্জার জোড়া আঘাতে ম্যাচে খুব ভালোভাবেই ফিরেছিল বাংলাদেশ। জশ বাটলার ও মঈন আলী যে ফিরে গিয়েছিলেন অল্প সময়ের ব্যবধানে। সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচ, অথচ তৃতীয় ওয়ানডের আগে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল অন্য এক বিষয়! জশ বাটলারের আউটের পর বাংলাদেশের উইকেট উদযাপন নিয়ে তৈরি হওয়া সেই আলোচনা ক্রিকেট বিশ্বের সব জায়গায়। ‘উন্মাদ’ উদযাপনের জন্য জরিমানাও গুনতে হয়েছিল মাশরাফিকে। সেই মাশরাফিই এবার বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফেরালেন ইংলিশ অধিনায়ককে। হলো না কোনও উদযাপন, বাটলারের ব্যাটে লেগে বল উইকেটে আঘাত করলেও নীরব বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। একেবারে নীরবতায় হলো অন্য রকম এক উদযাপন। উদযাপন করেনি মঈন আলীর উইকেটেও। এই ব্যাটসম্যানকেও ফিরিয়েছেন মাশরাফি। ওই শেষ, এর পর আর কোনও উইকেট পায়নি বাংলাদেশ।
এর আগে দুই ওপেনার জেমস ভিন্স ও স্যাম বিলিংস শুরু থেকেই ব্যাটিং করেছেন ঠাণ্ডা মাথায়। কিছুতেই সুবিধা করতে পারছিল না বাংলাদেশের বোলাররা। ১২তম ওভারে তাই মাশরাফি বল তুলে দিলেন নাসির হোসেনকে। এই স্পিনার এসেই করলেন বাজিমাত। ফেরালেন ভিন্সকে (৩২)। এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে এনে দেন প্রথম উইকেট। তিনি ফিরলেও সেট হয়ে গিয়েছিলেন স্যাম বিলিংস। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। একটু একটু করে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা বিলিংসকে আউট করে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ। ৬২ রান করা এই ওপেনারকে ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন। তাতে বেন ডাকেটের সঙ্গে তার গড়া ৬৪ রানের জুটিও ভাঙে। দারুণ ব্যাটিংয়ে ডাকেটও তুলে দেন হাফসেঞ্চুরি, যার পথে তিনি ৪৫ রানে জুটি গড়েন জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে। শফিউল ইসলামের বলে বেয়ারস্টো (১৫) বোল্ড হয়ে গেলে খেলায় ফেরে বাংলাদেশ। এই শফিউলের বলেই ৬৩ রানে করে আউট হয়েছেন ডাকেট। তার আগে অবশ্য গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন জয়ের পথ, যে পথে হেঁটে পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা নিশ্চিত করেছে সিরিজ।
বৃষ্টির কারণে খেলা হবে কিনা, সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচের আগে এটাই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কোনও বাগড়া ছাড়াই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। যেখানে অনেক দিন পর নিজেকে ফিরে পেয়েছেন মুশফিক। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক স্বরুপে ফিরলেন সঠিক সময়েই। মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসানের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন হার না মানা ৬৭ রানের ইনিংস খেলে। যোগ্য সঙ্গ পেয়েছেন মোসাদ্দেকের কাছ থেকে। এই ব্যাটসম্যান ইনিংস শেষ করেছেন ৩৮ রানে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবাল। উদ্বোধনী জুটিতে তারা যোগ করেন ৮০ রান। ইমরুল হাঁটছিলেন হাফসেঞ্চুরির পথেও, কিন্তু পারলেন না। ৪৬ রানে আউট হয়ে গেছেন এই ওপেনার। বেন স্টোকসের বলে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন তিনি ডোয়াসনের হাতে। তামিমও হাফসেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে। আদিল রশিদের বলে ৪৫ রান করে তিনি কাভারে ধরা পড়েন জেমস ভিন্সের হাতে। তার আগে অবশ্য ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি।
তামিমের আউটের পর পরই আবার ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ যে ফিরে যান দ্রুত। আগের ম্যাচে ৭৫ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যান সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে আউট হয়েছেন মাত্র ৬ রানে। আদিল রশিদের বলে শর্ট কাভারে ধরা পড়েন তিনি জনি বেয়ারস্টোর হাতে। এর পর অবশ্য মুশফিককে সঙ্গে করে সাব্বির রহমান বড় একটা জুটি গড়ে এগিয়ে নিয়েছেন স্বাগতিকদের। চতুর্থ উইকেটে তারা যোগ করেন ৫৪ রান। সাব্বির পৌঁছে গিয়েছিলেন হাফসেঞ্চুরির কাছাকাছিও, কিন্তু ভালো শুরু করেও তামিম-ইমরুলের মতো ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। এই ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন ৪৯ রানে। আদিল রশিদের বলে ধরা পড়েন তিনি উইকেটরক্ষক জশ বাটলারের গ্ল্যাভসে।
তার পর দূর্ভাগ্যের শিকার হন সাকিব আল হাসান। এই অলরাউন্ডার ৪ রানে স্টাম্পড হয়ে ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে। মঈন আলীর বল উইকেট ছেড়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতেই খেলেছিলেন সাকিব, যদিও বল ব্যাটে না লেগে উইকেটরক্ষক জশ বাটলারের গ্ল্যাভসে গিয়ে পড়ে। বাটলার স্টাম্পড করলে হয়তো বেঁচে যেতেন সাকিব, কিন্তু বল তার গ্ল্যাভসে জমা না হয়ে বেরিয়ে এসে আঘাত করে উইকেটে। নাসির হোসেনও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ফুলটস বলে মাত্র ৪ রান করে আউট হয়েছেন তিনি রশিদের বলে। এর পর মুশফিক-মোসাদ্দেকের হার না মানা ৮৫ রানের জুটিতে লড়াই মতো স্কোর দাঁড় করে বাংলাদেশ।
তাতে অবশ্য লাভ হলো না। টানা সপ্তম সিরিজ জেতার স্বপ্নটা ভেস্তে গেছে বেদনাদায়ক হারে।