রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মনিরঝিল গ্রামে বাঁকখালী নদী দখল করে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করছে প্রভাবশালী চক্র। চক্রটি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদী ও নদীর তীর দখল করে নির্মাণ করছে পাকা স্থাপনা। এজন্য বিশাল দেয়াল নির্মাণ করে দখল করা হয়েছে নদীর তীর। নদী থেকে অনুমোদনহীনভাবে বালি উত্তোলন করে দখলকৃত জমি ভরাটও হয়েছে নির্বিঘ্নে। এটির পাশেই নদী ও তীর দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে আরও অসংখ্য স্থাপনা। দখল করা হয়েছে নদী ভাঙন রক্ষায় স্থাপিত ব্লকের বেড়িবাঁধও। কেবল স্থাপনা নির্মাণ নয়, নদীর তীর ঘেঁষে কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার জনসাধারণের চলাচলের সড়কটিও বন্ধ করে দিয়েছে জবর-দখলকারি চক্র। এ কারণে বন্ধ হয়ে পড়েছে মানুষের চলাচল, গবাদি পশু ও কৃষি পণ্য আনা-নেওয়া।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ওই এলাকার সাবেক মেম্বার মোহাম্মদ হোছন ও তার ৩ ছেলে নদী ও চলাচলের রাস্তা জবর-দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নিজেদের বিপুল জমিজমা থাকা সত্তে¡ও নির্বিচারে নদী ও জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এভাবে নদী ও শতবছরের পুরনো রাস্তা দখলের ফলে এলাকায় জনমনে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায় বাকখালী নদীর তীরবর্তীস্থ মনিরঝিল ২নং ওয়ার্ড এলাকায় শতবর্ষীয় চলাচলের পথে বাশের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে এ পথ দিয়ে চলাচল করা হাজার হাজার বাসিন্দা পড়েছে চরম দূর্ভোগে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের আচরন হয়ে উঠে আক্রমণাত্মক। জমি দখলের উদ্দেশ্যে সড়কে দেওয়া হয়েছে ৪-৫ টি বাঁশের বেড়া। তার ভিন্ন প্রান্তে জায়গা দখল করে চলছে বহুতল বাড়ি নির্মানের কাজ।
স্থানীয় বাসিন্দা কাদের হোসেন ও আবদুল গফুর জানিয়েছেন- সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হোছন ও তার ছেলে আবুল মনছুর, মোহাম্মদ ফয়েজ, আব্দুল গফুর সুমনের নেতৃত্বে নদীর তীরসহ আশপাশের বিপুল জমি জবর-দখল করা হচ্ছে। সম্প্রতি তারা বাঁকখালী নদী দখল করে অনেকগুলো দোকানপাট নির্মাণ করেছেন। এখন নদীর বিশাল অংশ দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এভাবে দখল চলতে থাকলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে আশপাশের গ্রামগুলোতে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাজেরা বেগম ও রেহেনা আকতার জানান- জবরদখলকারিরা নদী দখলের পর এখন নদীর তীর ঘেঁষে শত বছরের পুরনো সড়ক দখল করে ঘেরাবেড়া দিয়েছে। এ কারণে তাদের মতো আশপাশের কয়েকটি গ্রামের জনসাধারণকে চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলাচলের সড়কটি খুলে দেয়ার দাবি জানাতে গিয়ে জবরদখলকারিদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন স্থানীয় একাধিক নারী-পুরুষ। নারীরা শ্লীলতাহানিরও শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে স্থানীয়দের আবারও মারধর এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানির হুমকীও দিচ্ছে হোছন মেম্বার ও তার ছেলেরা।
স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক ওবাইদুল হক জীবন জানান- বাপদাদার আমল থেকে আমি দেখে আসছি আমার জন্মস্থান বা আমার ভিটা-জমি থেকে বাকখালী নদীর পাড় ছিল প্রায় ১ কানি বা ১২০ শতক পরিমাণ বালুচর! বাকখালী নদীর ভাঙনের ফলে রাস্তা সহ ভেঙে যাওয়াতে সরকার নদীর পাড় রক্ষার্থে ব্লক বসিয়েছে। এতে আমার ভিটা-জমি থেকেও অনেক জায়গা ছেড়ে দিয়ে দিয়েছি মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা করে দিতে। এমনকি আমার বাড়ির একপাশ ভেঙে রাস্তা করে দিয়েছি। কিন্তু চিহ্নিত ভূমি খেকোরা একের পর স্থাপনা ও ঘেরাবেড়া দিয়ে মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের জায়গা রয়েছে বলে দাবি করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এটি মেনে নেয়া যায়না। এর সঠিক সমাধানের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবরদখলে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হোছনের ছেলে মোহাম্মদ ফয়েজ জানান, নদীর পাশের জমি তাদের খতিয়ানভূক্ত জমি। চলাচলের পথ অনেক আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন লোকজন তাদের খতিয়ানভূক্ত জমির উপর দিয়ে চলাচল করছে। তাই তারা নিজেদের জমিতেই স্থাপনা নির্মাণ করছেন এবং চলাচলের পথ বন্ধ করে ঘেরাবেড়া দিয়েছেন। এরপরও স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হলে জনস্বার্থে চলাচলের পথ খুলে দেবেন বলেও জানান তিনি।
রামু উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার জানিয়েছেন- জবরদখলের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ ব্যাপারে সহসা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।