নির্বাচনের কারণে এ বছর বই উৎসব পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। তবে সেই শঙ্কা এখন আর নেই। এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই উৎসব উদ্বোধনের পর বছরের প্রথম দিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যেই দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করতে হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে এমন পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ফলে নির্বাচনকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। নির্বাচনি আয়োজন শুরু ও ভোটের পরের দিন পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময় ছাড়া আগে ও পরে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বই বিতরণ এবং ভর্তি কার্যক্রম চলবে।
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে এর আগে গত ২৮ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, বই উৎসব পিছিয়ে যেতে পারে। ঠিক ১ তারিখে (জানুয়ারি) নাকি ১০-১১ জানুয়ারি হবে সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আলোচনা চলছে। যেহেতু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন।
জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ১ জানুয়ারিই বই উৎসব করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু বই বিতরণ চলবে ১ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত। বই বিতরণ ও ভর্তির একটি ডেডলাইন থাকা উচিত। প্রতি বছরই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। বই বিতরণ চলছে। দুই-তিন ঘণ্টার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দিচ্ছে। এগুলো দেখভাল করা হয় না। এ জায়গায় শৃঙ্খলা আনা উচিত। যত রকম প্রক্রিয়া রয়েছে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে হবে। তাহলে দেখা যাবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সবাই ভর্তি হয়ে গেছে। এতে শ্রেণি কার্যক্রমও যথাসময় শুরু করা যায়। এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
বই ছাপা সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন বলেন, বেশিরভাগ বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। নতুন কারিকুলামের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই চলে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই পৌঁছে যাবে। কোনও প্রকাশক কিছু বই ৭ তারিখের মধ্যে দিলেও সমস্যা হবে না।
এনসিটিবি জানায়, প্রায় সব বই দেওয়া হলেও যখন কিছু বই বাকি থাকে তখন সমালোচনা হয়। অথচ কয়েক দিনের মধ্যেই সেই বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। বই বিতরণের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা উচিত। ভর্তির ক্ষেত্রে তেমনটিও হওয়া জরুরি।
৩০ কোটির বেশি পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে
এনসিটিবি জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকা বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮টি পাঠ্যবই। প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জনকে দেওয়া হবে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৬৯৭টি পাঠ্যবই।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ লাখ ৫ হাজার ৩১টি পাঠ্যবই। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৬টি পাঠ্যবই।
মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭টি পাঠ্যবই। দাখিল ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২টি পাঠ্যবই।
ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭টি পাঠ্যবই। কারিগরি ট্রেডের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৪ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০২টি পাঠ্য বই। এসএসসি ভোকেশনাল ৬ হাজার ১৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৫টি পাঠ্য বই। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া হবে ৭২৮টি বই।
এছাড়া শিক্ষকদের জন্য ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি শিক্ষক সহায়িকা দেওয়া হবে।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন