কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের ঐতিহ্যবাহী স্বর্গপুরী উৎসব আগামী ১৯ এপ্রিল, শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জানা গেছে, এবছর ৩৯তম বারের মত স্বর্গপুরী উৎসব উদযাপিত হবে।
দীর্ঘ ৩৯ বছর আগে প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের তৎকালীন বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞামিত্র মহাথের উক্ত স্বর্গপুরী উৎসবের প্রবর্তন করেন। সময় যতই গড়িয়েছে তাঁর জীবদ্দশায় উক্ত ধর্মীয় উৎসব জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবার প্রিয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সানন্দ উপস্থিতিতে সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশে উক্ত উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।
পরবর্তীতে ২০০৭ সালে ভদন্ত প্রজ্ঞামিত্র মহাথের’র প্রয়াণ হলে তার অগ্রজ শিষ্য ভদন্ত সারমিত্র মহাথের উক্ত উৎসবের হাল ধরেন। পরে ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল ভদন্ত সারমিত্র মহাথের’র প্রয়াণ হলে বিহারের দায়ক-দায়িকা ও গ্রামবাসী অনুষ্ঠানের ধারা অব্যাহত রাখেন।
সাংবাদিক নীতিশ বড়ুয়া ও বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক টিটু বড়ুয়া জানান, স্বর্গপুরী উৎসব উদযাপন উপলক্ষে আলোকসজ্জা, প্রভাতফেরী সহকারে বুদ্ধপূজা, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কারদান, অতিথি ভোজন, নানান সাজে দলীয় নৃত্য, আলোচনা সভা, ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বুদ্ধকীর্তন অনুষ্ঠিত হবে। এসময় তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবহে বরাবরের মতোই এবারের ৩৯তম স্বর্গপুরী উৎসব উদযাপিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কেন এই উৎসব ?
ত্রিপিটকে একত্রিশ লোকভূমির কথা উল্লেখ আছে। ২০টি ব্রহ্মলোক (৪টি রূপ ব্রহ্মভূমি + ১৬টি অরূপ ব্রহ্মভূমি) , ৭ কামসুগতি ভূমি ( ৬টি স্বর্গ + মনুষ্যলোক) এবং চারি অপায় ভূমি ( তির্য্যক, অসুর, নরক ও প্রেত ভুমি)। বুদ্ধের মতে, নির্বাণ সাক্ষাৎ না করা অবধি যার যার কর্মফল অনুযায়ী সত্ত্বগণকে এসকল লোকভূমিতে ঘুরপাক খেতে হয় অর্থ্যাৎ জন্ম-মৃত্যু, উৎপত্তি-চ্যুতি এবং আসা-যাওয়ার কবলে পড়তে হয়। মূলত এটিই পুনর্জন্ম দর্শন। উক্ত ৩১ লোকভূমির মধ্যে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ভূমি হলো, ৫টি শুদ্ধাবাস ব্রহ্মভূমি যা রূপ ব্রহ্মভূমির অন্তর্ভুক্ত। এই পাঁচটি শুদ্ধাবাস ব্রহ্মভূমিতে কেবল মনুষ্যলোকে ধ্যান-সমাধি বলে অনাগামী মার্গফলে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাই উৎপন্ন হতে পারেন। অনাগামী মানে তিনি সংসারে আর গমনাগমন করবেন না। তিনি আগামী এক জন্মের মধ্যেই শুদ্ধাবাস ব্রহ্মভূমি থেকেই নির্বাণ সাক্ষাৎ করবেন।
এই পাঁচটি শুদ্ধাবাস ব্রহ্মভূমি ছাড়া অবশিষ্ট ২৬টি লোকভূমির যেখানেই সত্ত্বগণের পুনর্জন্ম তথা উৎপত্তি ঘঠুক না কেন তাকে সেখান থেকে চ্যুত হতে হয়। এমনকি স্বর্গলোকে উৎপন্ন হলেও সেখানেও স্থায়ী হওয়া যায়না। নির্দিষ্ট পরমায়ু শেষ হলে সেখান থেকেও চ্যুত হতে হয়। মূলত, স্বর্গপুরী উৎসবে এই দর্শনটাকেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই এটির অপর নাম সংসারচক্র মেলা। স্থানীয়রা এটাকে ব্যুহচক্র কিংবা প্যাঁচঘর বলে থাকেন।