চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে এতো আলোচনা হয়নি, যা হচ্ছে ঢাকার উইকেট নিয়ে। এমনিতেই ঢাকার উইকেট স্বভাবতই একটু আলাদা। আর তাই দুই দলের খেলোয়াড়রা ম্যাচের আগের দিনও বুঝছেন না উইকেটের চরিত্র ঠিক কেমন হবে। আর উইকেটের সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে বৃষ্টির আশংকা। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
আবহাওয়া সংবাদে আগামী দুইদিন বৃষ্টিপাতের শংকা রয়েছে। তাই আবহাওয়ার রিপোর্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো ছাড়া যথাসময়ে ঢাকা টেস্ট শুরুর সম্ভাবনা নেই। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড় কায়ান্টের প্রভাবে ঢাকার প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দুপুরে ৪-৫ ঘণ্টার জন্য বৃষ্টি কমলেও সন্ধ্যা থেকে আবার বৃষ্টি হয়েছে। দুই দলকে তাই রণকৌশল সাজানোর আগে বৃষ্টি নিয়ে গভীর ভাবেই ভাবতে হচ্ছে।
বৃষ্টির কারণে উইকেট নিয়েও ভাবতে হচ্ছে দু’দলকে। এমনিতেই ঢাকার উইকেটে স্পিন কম ধরে। তার মধ্যে উইকেট ঠিকমতো না শুকালে ম্যাচের তৃতীয় দিন থেকে উইকেটে খেলা কঠিন হয়ে যাবে। চট্টগ্রামের মতো মিরপুরে উইকেট তৈরি করা অনেকটাই কঠিন। তারপরও যতটুকু সম্ভাবনা ছিল বৃষ্টির কারণে উইকেট পুরোপুরি শুষ্ক হওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। আর এই কারণে ঢাকা টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে টস। টসে জেতা ভাগ্যবানই টেস্টে চালকের আসনে থাকতে পারে।
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ রোমাঞ্চকর পারফরম্যান্স করে শুক্রবার ঢাকা টেস্টে মুখোমুখি হচ্ছে। প্রথম টেস্টে ভালো খেলায় স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের ওপর প্রত্যাশার মাত্রা বেড়েছে। মুশফিক অবশ্য চাপটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন। তিনি টেস্টে ধারাবাহিক ভাবে পারফরম্যান্স করতে চান। অন্যদিকে, বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে ইংলিশরা চট্টগ্রাম টেস্টের চেয়ে আরও ভালো পারফরম্যান্স করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইংলিশদের জন্য সিরিজ জয়ের লক্ষ্য হলেও বাংলাদেশের জন্য সিরিজে সমতা ফেরার লড়াই। শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সকাল দশটায় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচটি শুরু হবে। সরাসরি গাজী টেলিভিশনে দেখা যাবে ম্যাচটি। এমনিতেই বাংলাদেশ নিয়মিত টেস্ট খেলতে পারছে না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রায় ১৪ মাস বিরতি দিয়ে টেস্টে ফিরেছে বাংলাদেশ। তাইতো ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির ১৬ বছর পরও বাংলাদেশের টেস্ট সংখ্যা মাত্র ৯৪টি!
ঢাকা টেস্ট নিয়ে দুই দলের মধ্যেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম টেস্টে ইংলিশদের কোনঠাসা করেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তাই নিজেদের ভুলগুলো শুধরে ঢাকা টেস্টে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলে ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। আশাবাদী মুশফিক বলেন, ‘জয়ের জন্য ছেলেরা ক্ষুধার্ত। আমরা ভালো খেলতে মুখিয়ে আছি। দল হিসেবে চট্টগ্রামে আমরা ব্যাকফুটে ছিলাম। আমরা ফেভারিট ছিলাম না। তবে আল্লাহর রহমতে শুরুটা ভালো হয়েছে। আমরা যেখানে শেষ করেছি সেখান থেকে শুরু করতে চাই। এখন আত্মবিশ্বাস বেড়েছে আমাদের। চট্টগ্রামের পারফরম্যান্স আত্মবিশ্বাসী করছে বাংলাদেশকে।’
ঢাকা টেস্ট মুশফিকের জন্যও মাইলফলকের ম্যাচ। শুক্রবার মুশফিক নিজের ৫০তম টেস্ট ম্যাচটি খেলতে নামবেন। এই ম্যাচে দলের উপকারে আসে এমন কিছু করতে চান তিনি। হয়তো মুশফিকের ব্যাটে চড়েই বাংলাদেশ দারুণ কিছু করবে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম টেস্টে অ্যালিস্টার কুকের ব্যাট না হাসলেও ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার রেকর্ডও ভালো। ২০১০ সালে বাংলাদেশে একমাত্র সফরে তিনি ৩৪২ রান করেছেন দুটি সেঞ্চুরিতে। যদিও চট্টগ্রাম সফরে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ ছিলেন। তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন বলেই বেশি ভয়! হয়তো ঢাকা টেস্টই ব্যাট হাতে রানে ফিরবেন তিনি! তবে বাংলাদেশের খেলায় উন্নতি ধরা পড়েছে ইংল্যান্ড অধিনায়কের কণ্ঠেও। তাইতো অ্যালিস্টার কুক বলেন, ‘ম্যাচে এত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, ভাবতেই পারিনি। বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছে। আশাকরি শুক্রবারের ম্যাচটিও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।’
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১৪টি টেস্ট খেলেছে। যার মধ্যে একটি ম্যাচে জয় পেলেও ড্র করেছে তিনটিতে। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে মাত্র ৮৮ ওভার খেলা মাঠে গড়ায়। এছাড়া মিরপুরে ইংলিশদের বিপক্ষে একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হেরেছে ৯ উইকেটে। সবমিলিয়ে মিরপুরে বাংলাদেশের টেস্ট পরিসংখ্যান খুব একটা ভালো নয়। অবশ্য পরিসংখ্যান সব সময় ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে না। সেটাই আশা টাইগারদের!
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরের ওই টেস্ট ম্যাচটিতে সাকিব ও তামিম অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন। সাকিব আল হাসান ৯৬ ও তামিম ইকবাল ৮৫ রান করে আউট হয়েছিলেন। হয়তো শুক্রবার সেঞ্চুরি মিসের ক্ষতিপূরণটা উঠিয়ে নেবেন ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে!
মুশফিক চট্টগ্রামের মতো ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ফাঁদে ফেলতে ঢাকাতেও টার্নিং উইকেট চেয়েছেন। বাংলাদেশের পরিকল্পনায় টার্নিং উইকেট বলেই স্কোয়াডে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজন স্পিনার। তাইজুল-সাকিব-শুভাগত-মেহেদী হাসানের পর স্কোয়োডে যোগ হয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ-সাব্বির-মুমিনুলও পারেন স্পিনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে।
যদিও ঢাকা টেস্টে একাদশে একজন পেসার খেলানো হলে অফস্পিনার হিসেবে শুভাগত হোমকে দেখা যেতে পারে। তবে ম্যাচের দিন সকালে উইকেট দেখেই সেরা একাদশ নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন মুশফিক। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই নতুন খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনের অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে বসে থাকতে হচ্ছে, এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
এদিকে ঢাকার উইকেট পড়তে হিমশিম খাচ্ছে ইংলিশ টিম ম্যানেজম্যান্ট। যদিও তারা এরই মধ্যে ইংলিশ দল ঘোষণা করে ফেলেছে। গ্যারেথ ব্যাটির বদলে ঢাকা টেস্টে খেলছেন জাফর আনসারি। এছাড়া ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডের বদলে মূল একাদশে খেলবেন স্টিভেন ফিন।