আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দলের মধ্যে থাকা ‘আবর্জনা’ পরিষ্কারের কথা বলেছেন নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রোববার সচিবালয়ে এক সংলাপে নিজের নতুন দায়িত্ব, দল, বিএনপির রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কাদের।খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম ‘উন্নয়ন ও সমসাময়িক রাজনীতি’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে। এতে সংগঠনের সভাপতি শ্যামল সরকার উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময়ে সাংবাদিকরা তার কাছে দলের দুর্বলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আছে, সমস্যাতো আছেই। এতবড় দল, এতবড় পরিবার। পরিবারের মধ্যে কিছু ছোটখাটো সমস্যা থাকে। বাস্তবতা অস্বীকার করে তো লাভ নেই।
“আবার ক্ষমতায় আসলে; কিছু ট্রাশেস ঢুকে গেছে, কিছু আবর্জনা, কিছু প্যারাসাইট …..এখানে, ওখানে নানান সমস্যা সৃষ্টি করে। এগুলোকে আমরা ঠিকঠাক করব।”
দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সরকারি দলের উন্নয়নের সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ঘর যদি ডিসিপ্লিনড না হয় তাহলে বাইরে আমরা কি করে ডিসিপ্লিনড করব। আপন ঘরকে ডিসিপ্লিনড করতে হবে।
“উন্নয়ন তরান্বিত করতে হলে পার্টিকে তার সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। সরকার শক্তিশালী, দল দুর্বল- এ অবস্থায় আমরা উন্নয়নের ফসল ঘরে তুলতে পারব না। এ লক্ষ্যেই এবার কার জাতীয় সম্মেলন।”
গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শেখ হাসিনা পুনরায় দলের সভাপতি নির্বাচিত হন, সঙ্গে নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পান ওবায়দুল কাদেরকে।
দলে কোনো শুদ্ধি অভিযানের পরিকল্পনা আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “অলরেডি বলে দেওয়া হয়েছে, অপকর্ম যারা করছে, যারা দলের সম্মানকে ক্ষুন্ন করছে, তারা যদি সংশোধন না হয়, পরবর্তী নির্বাচনে তাদের নমিনেশনের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলেও আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “বিএনপি নির্বাচনে আসবে এবং ভালভাবেই আসবে। বিএনপি আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না। আগের ভুলের চোরাবালিতে অনন্তকাল তারা আটকে থাকবে না।”
বিএনপি অংশ না নিলে আগামী নির্বাচন তাদের ছাড়াই হবে কি না- জানতে চাইলে তার উত্তর, “যদি কেউ না আসে তাহলে আমরা কী করব?”
নির্বাচন কশিমন পুর্নগঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সংবিধানে যেভাবে আছে, সেভাবেই হবে। বিএনপির মহাসচিবের এখানে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।”
আগামী ফেব্রুয়ারিতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বর্তমান কমিশনের মেয়াদপূর্তির পর নতুন ইসির অধীনে ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
নতুন কমিশন নিয়োগে আগের বারের মতো এবারও ‘সার্চ কমিটি’ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সার্চ কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নতুন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি ভয়কে জয় করতে পারেনি। আন্দোলনেও পারেনি, নির্বাচনেও পারেনি। তারা একটা ভয়ের মধ্যে আছে।”
কিসের ভয়- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “এতবড় একটা দল, ৫০০ লোকের মিছিল করতে পারে না।”
তবে বিএনপির শক্তির কথা উল্লেখ করে তাদের ‘তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য’ করছেন না বলেও জানান কাদের।
“এখনও আওয়ামী বিরোধী শক্তি বিএনপির ব্যানারেই শেল্টার নেয়, ওই ছায়াতেই তারা আশ্রয় নেয়। কাজেই ওরা খুব দুর্বল তা আমি মনে করি না,” বলেন তিনি।
২০১৩ সালে খালেদা জিয়াকে গণভবনে শেখ হাসিনার দাওয়াত দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশের প্রয়োজনে সংলাপ শেখ হাসিনা করবেন। কিন্তু এ মুহূর্তে সংলাপের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।”
দেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা এখনও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
“আমরা যদি মনে করে টেররিস্টরা থেমে গেছে, পুলিশি অভিযানের ভয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে, এরকম ভাবাটা মোটেও সঠিক হবে না। তারা এখনও আরও বড় ধরনের হামলার হয়তো তলে তলে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাজেই এটা একটা চ্যালেঞ্জ। নিরবতার মধ্যেই ঝড় আসে।”