ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরসহ বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় পুলিশ মন্ত্রী ও সাংসদকে রক্ষা করতে ‘সাজানো তদন্ত প্রতিবেদন’ জমা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।
রাজধানীতে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।রিপোর্ট বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সোমবার পুলিশ সাজানো ও মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সেখানে আওয়ামী লীগের ১৮ নেতাকর্মীর সঙ্গে বিএনপির নাসিরনগর উপজেলার সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন ও ইউনিয়ন যুব দলের সহ-সভাপতি বিল্লাহ হোসেনের নামও জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের প্রতিবেদনে ওই ঘটনার সঙ্গে বিএপির স্থানীয় দুই নেতাকে জড়িত করায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “একই সঙ্গে এই সাজানো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রত্যাখান করছি। মূলতঃ স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীকে বাঁচাতেই এই সাজানো মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করেছে।”
ফেইসবুকে ‘ইসলাম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দুদের শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
পরদিন স্থানীয় বারোয়ারি মন্দিরের পুরোহিতসহ দুই ব্যক্তি দুটি মামলা দায়ের করেন। প্রত্যেক মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০০০ থেকে ১২০০ জনকে আসামি করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগ নেতাদের দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অন্তর্কোন্দল এই হামলার পেছনে ইন্ধন হিসেবে কাজ করেছে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রিজভী বলেন, “আমরা মনে করি, বিএনপির দুই নেতাকে জড়িয়ে প্রতিবেদন দাখিল শুধু হাস্যকরই নয়, বরং নিজেদের দুষ্কর্মকে ঢেকে দেওয়ার একটি অপচেষ্টা। এটা করা হয়েছে শুধু গায়ের জোরে, নিজেদের অপকর্মে ভারসাম্য আনার জন্যে।
“তারা (আওয়ামী লীগ) যে অপকর্ম করেছে, এটা সুস্পষ্ট। দেশবাসী সব কিছু জানেন, যেসব টিম সেখানে গেছেন, তারাও বলেছেন। হিন্দু মহাজোটের নেতারাও বলেছেন, শাসকদলের লোকেরাই এর জন্য দায়ী।”
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে, নাসিরনগরের ঘটনাটি আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলেই সংঘটিত হয়েছে। এর সাথে স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রী জড়িত। প্রকৃতপক্ষে সরকার তার দলের মন্ত্রী, এমপি ও নিজ দলীয় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বাঁচাতেই বিএনপির দুই স্থানীয় নেতার নাম প্রতিবেদনে অন্তভুর্ক্ত করেছে।
“আমরা বিএনপির স্থানীয় নেতাদের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”
নির্বাচন কমিশনের রূপরেখা প্রস্তুত
দলীয় আনুগত্য থাকবে না এমন ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের একটি রূপরেখা বিএনপি এর মধ্যে প্রস্তুত করেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করলে সেটি যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেরই প্রতিফলন হবে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সেজন্য দল নিরপেক্ষ সার্চ কমিশন গঠনের বিষয়ে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে আহবান জানিয়ে আসছে বিএনপি।
“একটি কমিটির মাধ্যমে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং নির্বাচনের বিষয়ে যারা দক্ষ, পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, তাদের মতামতের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষযে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন।”
শুক্রবার বিকাল ৪টায় গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের বলরুমে খালেদা জিয়ার এই সংবাদ সম্মেলন হবে।
রূপরেখায় কি থাকবে- সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রিজভী বলেন, “আমি শুধু এতোটুকু বলতে চাই, গণতন্ত্রের পথ চলা এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিকাশের জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দরকার, যা অবশ্যই কোনো দলের আনুগত্য থাকবে না। এই বিষয়গুলো রূপরেখাতে থাকবে।”
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল খান, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ ও আকম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।