গিয়াস উদ্দিন ভুলু , টেকনাফ:
সারা বাংলাদেশে শিক্ষার হার বেড়েই চলছে, অথচ টেকনাফ উপজেলার সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষ শিক্ষার হার থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে। কারণ এই উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা দায়সারা ভাবে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছেন। এই উপজেলায় বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে মাত্র ২-৩ জন শিক্ষক দিয়ে। অথচ এই সমস্ত স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতির সংখ্যা ৭০০-৮০০শত।
সরেজমিনে আরো দেখা যায়, এই শিক্ষা-প্রতিষ্টান গুলোতে পাঠদানে নেই কোন শৃংখলা, নেই কোন লেখাপড়া, অপরদিকে এই উপজেলার বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের মাঝে এখনো রয়ে গেছে আদিকালের পুরানো সংস্কৃতি।
অনেক মানুষ এখনো নিজের ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়ার জন্য স্কুলে না পাঠিয়ে টাকা রোজগার করার জন্য বিভিন্ন কর্মস্থলে ব্যবহার করে আসছেন প্রতিনিয়ত।
অন্যদিকে এমনো পরিবার রয়েছে যারা কম বয়সে নিজের ছেলে-মেয়েকে বাল্য বিবাহে আবদ্ধ করছেন এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করছেন এই কমলমতি ছেলে-মেয়েদেরকে। এতে টেকনাফ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো শিক্ষার হার খুবই নাজুক।
আরো জানা যায়, টেকনাফ উপজেলায় ১৩৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই বিদ্যালয় গুলো থেকে প্রতি বছর শত শত পরীক্ষার্থী পিএসসি (সমাপনি) পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে আসছে। কিন্তু প্রতি বছর অনেক ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রেজিষ্টশন করলেও পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অনেক পরীক্ষার্থীকে অনুপস্থিত দেখা যায়। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২০ নভেম্বর টেকনাফ উপজেলায় প্রাথমিক (পিএসসি) ও ইবতেদায়ী (ইএসসি) শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রথম দিনে ৪০০ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত দেখা যায়। তাদের মধ্যে পিএসসিতে ২০০ এবং ইবতেদায়ীতে ২০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
গত ২০ নভেম্বর রোববার সকালে টেকনাফ উপজেলার ১১টি কেন্দ্রে একযোগে উৎসব মুখর পরিবেশে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ১৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৩৯৭৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩৭৭৫ ছাত্র-ছাত্রী।
তার মধ্যে ২০০ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। এদের মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ১৮১৪ জন, ছাত্রী সংখ্যা ২১৬১ জন। অপরদিকে এই উপজেলায় ৩০ টি ইবতেদায়ী শিক্ষা- প্রতিষ্ঠান সমাপনী পরীক্ষায় ১৩৬৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরিক্ষায় অংশ নেয় ১১৬৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৫৪৯ ছাত্রী সংখ্যা ৮১৪ জন। উক্ত প্রতিষ্টান গুলোর মধ্যেও ২০০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন না করে অনুপস্থিত রয়েছে।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশিষ বোস আমাদের রামু কে জানান, যে সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষায় অংশ গ্রহন না করে অনুপস্থিত রয়েছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সেই সমস্ত স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোন অনিয়ম ও অবহেলা ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, টেকনাফ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ এখনো আদিকালের পুরানো সংস্কৃতি অবলম্বন করে যাচ্ছে। নিজের ছেলে-মেয়েদেরকে লেখা-পড়া করার জন্য স্কুলে না পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে। এই উপজেলায় শিক্ষার মান বাড়াতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে আরো কঠোর ভুমিকা পালন করতে হবে। পাশ^বতী স্কুল গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদেকে ঠিকমত পাঠদান দিচ্ছে কিনা সেই ব্যাপারেও তদারকি করতে হবে।