নঈম আল ইস্পাহান:
রাত দশটা।হঠাৎ চা খেতে মন চাইল।মামাকে কল দিলাম। (ওনার ঘর আমার মায়ের এলাকায় তাই ক্লাসমেট হয়েও মামা) মামা আর আমি আরেক মামার দোকানে চা খেয়ে বাসায় ফিরছি। এক লোক সামনে এসে দাঁড়াল। লোকটি দেখতে খুবই অসহায়। মাথায় এলোমেলো চুল।লম্বা,লম্বা দাড়ি,গোফ।
গায়ে ছেড়া পাঞ্জাবী। হাতে একটি প্যাকেট। খুব খেয়াল করে দেখলাম প্যাকেটে কিছু আলু,মরিচ,বেগুন,দুয়েকটা পেয়াজ। খুব বিনয়ের সাথে হাত পাতল।
আমি একবার মামার দিকে তাকিয়ে সাত পাচঁ না ভেবে লোকটিকে পাচঁ টাকার একটি নোট দিয়ে নিজের গন্তব্যে হাঁটছি। ত্রিশ সেকেন্ডের ব্যবধান। ধপাস করে একটি ভয়ঙ্কর শব্দ হলো।
পিছন ফিরলাম। সে লোকটি হাত পা ছড়িয়ে খুব ভয়ঙ্কর রকমের কাঁপতে থাকে। দৌড়ে ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। অনেক মানুষ এসে জড়ো হলো। সবাই ওনার নাকে চামড়ার জুতোর ঘ্রাণ শুকনোর চেষ্টা করতে থাকে। অনেকে পায়ে হালকা আঘাত করল। সবাই বলল কিছুক্ষনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে।
ব্যস্ততার কারণে আমরা চলে আসলাম। আমার তখন মনে হলো আচ্ছা মানুষটি এত অসহায় তার সাথে যোগ আছে এরকম এক জঘন্য অসুখ ? এ কেমন নিয়তি তার। খোদার দুনিয়ায় গরিব কেন ক্ষুদ্রতর গরিব?
নিশ্চয়ই তার পরিকল্পনা এরকমই। আচ্ছা তার পরিবার আজ রাতে কী খাবে?তারা কী উপোষ থাকবে?তাদের পরিবারে কে উপার্জন করে ? হাজার প্রশ্নের উঁকি দিতে থাকে।সে আমার কাছে টাকা চাইল। আমি দিলাম। আচ্ছা আমি বাংলার হাজার ভদ্রতার মুখোশধারীদের মত মুখ ফিরিয়ে চলে যেতাম ? তার ত্রিশ সেকেন্ড পরই লোকিটি মাটিতে লুঠিয়ে পড়ল। বা কোন হাঙ্গামা ছাড়াই মারা গেল। আমার জন্য কী হতো তা খোদার প্রেরিত কোন সাজা ? যা চিরজীবন অামাকে ধ্বংস করবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালিকণার মত!
কিন্তু না। সৃষ্টিকর্তা সেদিন আমাকে পশু বানাননি। আমাদের সমাজে এরকম অনেক কিছুই ঘঠে যায়। আমরা ইচ্ছে করেই যা না দেখার ভান করে এড়িয়ে যায়। খবর নিয়ে দেখুন আপনার একটু সাহায্যই পারতো তাদের সুষ্ঠ ভাবে বাঁচতে। পারতো ভালো মানুষের মত থাকতে। আসুন সকলে আমরা তাদের আমাদের মত বাঁচতে সাহায্য করি।
রামু,রাজারকুল।