প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ
কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে বিএনপির চলমান সাংগঠনিক পুনর্গঠনে চলছে তোড়জোড়। চূড়ান্ত করা হচ্ছে জেলা ও মহানগর বিএনপির সম্মেলনের দিনক্ষণ। চলতি ফেব্রুয়ারিতেই আয়োজন করা হচ্ছে অন্তত ১০টি জেলার সম্মেলন। মার্চে এ সংখ্যা হতে পারে অন্তত ২০। ৭ই ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সম্মেলনের মাধ্যমে শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের এ সিরিজ আয়োজন। কাউন্সিলের আগেই বেশির ভাগ জেলা সম্মেলন শেষ করতে চায় বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় ও চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একাধিক সূত্র পুনর্গঠন কার্যক্রমের এ অগ্রগতির তথ্য জানিয়েছে।
সরকার ও প্রশাসনের নানা প্রতিবন্ধকতায় বারবার ভেস্তে গেছে উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে বিএনপির সম্মেলন। এতে বিলম্ব হয়েছে জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠান। প্রতিকূল পরিস্থিতির পাশাপাশি জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতাদের নানা অজুহাত তৃণমূল সম্মেলনে বিলম্ব করতে রেখেছে ভূমিকা। অন্যদিকে কেন্দ্রের নানা দায়িত্ব পালন ও তদারক করতে গিয়ে নিজ জেলার সম্মেলন আয়োজন করতে পারেননি অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। কিন্তু জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের ঘোষণার পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট।
উপজেলা ও পৌরসভার মধ্যে যেগুলোর সম্মেলন বাকি ছিল তা শেষ করতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে কাজ করছেন নেতারা। চূড়ান্ত করা হচ্ছে একের পর এক জেলা সম্মেলনের দিনক্ষণ। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, নানা অসুবিধার কারণে অনেক জেলায় সম্মেলন আয়োজন করতে বিলম্ব হয়েছে। নেতারা বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় সম্মেলনের প্রাথমিক দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে তা দুয়েকদিন এদিক-ওদিক হতে পারে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন দলের অন্যতম কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ধরে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে বিঘ্ন ঘটেছে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে। একপর্যায়ে নেতাদের সক্রিয় করতে ভূমিকা রেখেছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটির সম্মেলনের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে চলমান সাংগঠনিক পুনর্গঠন কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্ব। সাংগঠনিক জেলা দুটির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ই ফেব্রুয়ারি।
কিন্তু অনুমতি জটিলতায় সেটা একদিন পেছানো হয়েছে। আগামী ৭ই ফেব্রুয়ারি এ দুই জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যৌথ এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন। যথারীতি এই দুই সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন আয়োজনের নেপথ্যে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন তাহসিনা রুশদীর লুনা। অন্যদিকে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে আছেন দলের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান। সিলেটের পর ৯ই ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলের দিন ঠিক করেছে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি। সেখানেও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাংগঠনিক পুনর্গঠন কর্মকাণ্ডের নির্দেশনা দিয়ে ২০১৫ সালের ৯ই আগস্ট কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীর ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের অনুপস্থিতিতে সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে আছেন। চলমান পুনর্গঠন কর্মকাণ্ড তদারক করতে গিয়ে তিনি আয়োজন করতে পারেননি নিজ জেলার কাউন্সিল। আগামী ২৬শে ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে নোয়াখালী জেলা বিএনপি। পরদিন ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে রাজবাড়ি জেলা বিএনপির কাউন্সিল।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির কাউন্সিলে আয়োজনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে আগামী ১লা মার্চ। এছাড়া আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কেন্দ্রের নির্দেশনা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সম্মেলন করবে এসব জেলা বিএনপি।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার জানান, চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলা সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত। বিশেষ করে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চাঁদপুর এগিয়ে রয়েছে। চলতি মাসেই এসব জেলার সম্মেলনের দিন চূড়ান্ত হতে পারে। রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা জানান, রাজশাহী বিভাগের একটি জেলায়ও সম্মেলন হয়নি। সব জেলাতেই কিছু কিছু উপজেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে। তবে উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে সবচেয়ে এগিয়ে আছে নওগাঁ জেলা বিএনপি। খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, খুলনা বিভাগে জেলা সম্মেলন শুরু হবে ঝিনাইদহ থেকে।
চলতি মাসেই বেশির ভাগ জেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ত্রাণ-পুনর্বাসন সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী জানান, প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। আগামী ৯ই ফেব্রুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঝিনাইদহে গেলে তার সঙ্গে আলোচনা করে সম্মেলনের দিন চূড়ান্ত করবেন। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান জানান, সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি। দুয়েকদিনের মধ্যেই দলের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।