যুক্তরাষ্ট্রের ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জ্যাজল-এ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও মানচিত্রখচিত জুতা দেখে সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
অনলাইন কেনাকাটার এই ওয়েবসাইটে সম্প্রতি লাল-সবুজ রঙে অনেক পণ্যের সঙ্গে জুতাও বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অনেকের নজরে আসে।
জ্যাজলের নতুন পণ্যগুলোর মধ্যে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশি ফ্ল্যাগ: শ্যামরক হাইটপ স্নিকারস’, ‘বাংলাদেশি ফ্ল্যাগ: শ্যামরক ফ্লিপ ফ্লপস’, ‘বাংলাদেশি ফ্ল্যাগ: লো টপ ও হাই টপ স্নিকারস’, ‘ক্র্যাজি ফ্ল্যাগ: স্লিপ অন স্লিকারস’, ‘আই লাভ বাংলাদেশ উইথ ম্যাপ স্লিপ অন স্লিকারস’, ‘আই লাভ বাংলাদেশ উইথ ম্যাপ স্লিপ অন স্নিকারস ম্যাপ হাই টপ স্লিকারস’।
বিজ্ঞাপনে জ্যাজল বলেছে, “আমাদের বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ সেকশনে দেখবেন কেবল পুরুষদের জন্য বাহারি ঢং,রঙ আর ধরনের জুতোগুলো আনা হয়েছে। দারুণ সব জুতাগুলো এখনই সংগ্রহ করুন। আর চাইলে বিনামূল্যেই জুতোর নানা ইমেজ, প্যার্টান আর টেক্সটও যোগ করতে পারেন আপনি।”
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার রেডউড সিটিতে রবার্ট বেভ, ববি বেভ আর জেক বেভ ১৯৯৯ সালে শুরু করেন জ্যাজলের ব্যবসা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও নিজের তৈরি পণ্য জ্যাজল-এ বিক্রির জন্য তোলা যায়। বাংলাদেশি পতাকার রঙের জুতাগুলো তৈরি করেছে ডেল্টা কাস্টম, নকশা করেছে শাওলিনমড।
জ্যাজলের এই বিজ্ঞাপটে চটে চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান সঞ্চালক মৌসুমী বড়ুয়া তার ফেইসবুকে লিখেছেন, “এ কোনো ধরনের ধৃষ্টতা! ধিক্কার’। পোস্টের সঙ্গে তিনি জুড়ে দিয়েছেন জ্যাজলের জুতার ছবি।
আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তফা লিখেছেন, “মার্কিন প্রতিষ্ঠান Zazzle বিশ্বের সব দেশের পতাকা মানচিত্র নিয়ে নানা ধরণের বাণিজ্য করে আসছে। এবার নজর দিয়েছে আমাদের দেশের দিকে। বাংলাদেশের পতাকা, মানচিত্রের ছবি এবং স্বাধীনতা দিবসকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের জুতা বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছে।
“অনেক দেশই এটাকে সহজভাবে নিলেও আমরা সহজভাবে নিতে পারি না। কেননা আমাদের মানচিত্র এবং পতাকার গায়ে লেগে আছে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত। আমাদের চেতনাকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে অনেক রমরমা ব্যবসা যদিও খোদ বাংলাদেশেই অনেক হচ্ছে। কিন্তু স্যান্ডেলে এর ব্যবহার নিঃসন্দেহে ধৃষ্টতা।এ ধরনের ধৃষ্টতার তীব্র প্রতিবাদ করছি।”
গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ফাহমিদা নিশি লিখেছেন, “সত্যি মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। যাদের রুচিবোধ এমন তাদের ধিক্কার জানাই।”
গণমাধ্যমে পতাকা আইনকে আরও জোরালোভাবে প্রচারের দাবি এসেছে ‘মোহাম্মদ সাবিত এহতেশাম’ নিক থেকে।
এহতেশাম লিখেছেন, “বাংলাদেশের এখনও অনেকেই পতাকার মর্যাদার ব্যাপারটির বিষয়ে জানে না, বিশেষ করে যারা পশ্চিমা সংস্কৃতির দ্বারা উদ্বুদ্ধ।”
সৌদি আরবের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আল খায়াম ইন্টারন্যাশনালে কর্মরত প্রবাসী সাকিউল ইসলাম লিখেছেন, “উই হ্যাট দ্য জ্যাজল ফ্যাক্টরি/ কোম্পানি।”
বাংলালিংকের কেয়ার লাইন অফিসার হাবিবুল ইসলাম লিখেছেন, “ছি, ধিক্কার জানাই। এই তো আমার স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকা”- সঙ্গে জুড়েন স্যাড ইমোটিকন।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক আল মুসলিম গ্রুপের কোয়ালিটি অফিসার মোহাম্মদ আলামিন লিখেছেন, “যেটা আমরা বুকে ধারণ করি, সেটা জুতার মধ্যে আসে কীভাবে?”
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুমানা রশিদ লিখেছেন, “কী লজ্জা! প্রতিবাদের ভাষাও তো হারিয়ে ফেলেছি।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার পর শনিবার জ্যাজলের ওয়েবসাইটে জুতাগুলো দেখা যাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশে পতাকার রঙে অন্য সামগ্রীগুলো রয়েছে।
সূত্র: বিডিনিউজ।