মূল : কে, শ্রী ধর্মানন্দ মহাথের, শ্রীলংকা
ভাষান্তর : প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু
মানুষ হিসেবে আমাদের তিনটি চরিত্র বা স্বভাব আছে। যেমন ইতর প্রকৃতি, মানব প্রকৃতি এবং দেব প্রকৃতি বা স্বভাব। ইহা উপলব্দি করতে আমাদেরকে স্বর্গ নরকে পুণঃজন্ম নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। জীব জন্তুর সীমিত বিচার শক্তি থাকে কিন্তু বিচার বা বোধশক্তির ব্যবহার দ্বারা আমরা মানুষেরা আমাদের জন্তু স্বভাবকে দমন কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এবং নিয়ন্ত্রণ করে আমরা আমাদের মানব প্রকৃতির বিকাশ করতে পারি এবং এমনকি আমাদের মাঝে দেব প্রকৃতি ও জাগাতে পারি।
জীবজন্তু তাদের জন্ত স্বভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না কারণ তারা সহজাত প্রকৃতি দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা মন ও বোধশক্তি দ্বারা বিচার বিশ্লেষণ করে উপলব্দি করতে পারি। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে কোন বস্তুগুলো নশ্বর আর কোন গুলো অবিনশ্বর, কোন গুলো পাপ সঞ্চারক আর কোন গুলো বিপদজনক এবং কোন বস্তুগুলো ভাল আর কোন বস্তুগুলো মন্দ তা আমরা বোধশক্তি দ্বারা বিচার করতে পারি। এজন্য মানুষকে অন্যান্য প্রাণীর উর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে।
আমাদের জন্ত স্বভাবকে দমন করে এবং প্রেম ও সহানুভুতি বর্ধন করে আমরা আমাদের ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা, সমঝোতাভাব, ঐক্য, সংহতি এবং সুনাম বৃদ্ধি করতে পারি যেদিক গুলো মানবিক গুণাবলী হিসেবে গণ্য হয়। ধর্মের মূখ্য উদ্দেশ্য হল উক্ত গুনাবলী সমূহকে উৎসাহিত করা। যাহোক, আমাদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে এই গুনাবলী সমূহের কিছু কিছু গুণ আমাাদের মধ্যে সুপ্ত থাকে।
বস্তুতপক্ষে, পৃথিবীতে ধর্ম বিশ্বাস সৃষ্টির আগেই আমরা এই অসাধারণ গুন সমূহের উন্নতি করেছিলাম। মানুষের মন এতই প্রগতিশীল যে ইহাকে স্বর্গীয় শান্তি প্রত্যক্ষ করাতে খুব সহজে উন্নত করা যায়। অন্যান্য প্রাণীরা এ্ই কাজটি করতে পারে না। মানুষের মন হচ্ছে একটি অত্যন্ত জটিল যন্ত্র। ইহা নারকীয় খারাপ অনেক কিছু সৃষ্টি করতে পারে। অন্যান্য প্রাণীর মতো যারা খাদ্য এবং আত্মরক্ষার জন্য হত্যা করে তদ্রুপ মন ও লোভ, হিংসা এমনকি রঙ্গের বশীভূত হয়ে মানুষের দ্বারা হত্যা করাতে পারে। কিন্তু তথাপি সে কখনো পরিতৃপ্ত হয় না। যখনি তার একটি কামনা পূর্ণ হয় ঠিক তখনি সে অন্য আরো কিছু আকাঙ্খা করে। যার ফলে সে সর্বদা অসুখী-ই থেকে যায়।
মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘প্রত্যেকের চাহিদা পূরণের জন্য জগতের অনেক কিছু আছে কিন্তু একজন লোভী মানুষকে তৃপ্ত করার মত বেশি কিছু নেই।’ মানুষেরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করছে অতি ক্ষমতা, অতি কর্তৃত্ব এবং অতি আয়েশ পাওয়ার সেই অতৃপ্ত কামনা বাসনার কারণে।