শওকত ইসলাম:
রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের পানিরছড়া মামুন মিয়ার বাজারে এক ভন্ড চিকিৎসকের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে গ্রামের অসহায় মানুষ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোন শিক্ষাগত যোগ্য বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই মিন্টু শর্মা নামের ওই চিকিৎসক নামের আগে ডাক্তার লিখে দিব্যি চিকিৎসার নামে প্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাজারের ভিআইপি প্লাস মেডিকোতে প্রতিদিন সকাল-বিকাল চেম্বার খুলে ওই চিকিৎসক যা আয় করেন দিনের শেষে ফার্মেসী মালিক আর কথিত এ চিকিৎসক নিজেরাই সব অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
দোকানের সামনে সাইন বোর্ডে ডাঃ মিন্টু শর্মা আর.এম.পি (ঢাকা) লেখা হলেও সরেজমিন গেলে ওই চিকিৎসক কোন সনদ বা প্রমাণাদি দেখাতে পারেননি। এক পর্যায়ে মিন্টু শর্মা সনদপত্র না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ইতিপূর্বে তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ডা. তৌহিদুল ইসলাম নামের চিকিৎসকের সহকারী ছিলেন। ওইসময়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই তিনি চিকিৎসা করেন।
তার রোগীরা সবাই সুস্থ হয় এমন দাবি করে মিন্টু শর্মা আরো জানান, তিনি ডা. লিখেন না। কিন্তু সোমাটেক নামের একটি ঔষধ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি তাকে ডাঃ লিখে প্যাড বানিয়ে দিয়েছে।
ফার্মেসী মালিক মো. আলম আমাদের রামু ডটকমকে জানান, মিন্টু শর্মা ৬ মাস এখানে রোগী দেখছেন। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন রোগি দেখেন। রোগি প্রতি ফি নেন ৫০ টাকা। আবার রোগীর বাড়িতে গেলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত নেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অনেকে সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ঔষধ লিখে ফার্মেসীর ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। আবার বিভিন্ন অখ্যাত ঔষধ প্রতিষ্ঠানের ঔষধ প্রেসক্রিপশনে লিখে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করছেন। এতে সাধারণ মানুষ যেমন আর্থিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তেমন অপচিকিৎসার শিকার হয়ে অনেকের জীবনহানি ঘটছে। আর এভাবে প্রতারনা হলেও দেখার যেন কেউ নেই।
এব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সারোয়ার মাহবুব আমাদের রামু ডটকমকে জানান, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাপ্রো মারমা আমাদের রামু ডটকমকে জানান, ওই দোকান ও চিকিৎসকের কাগজপত্র যাচাই করা হবে।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুল মন্নান আমাদের রামু ডটকমকে জানান, এরকম ভূয়া চিকিৎসকদের কারণে ভালো চিকিৎসকদের প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছেন। তাই এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাজাহান আলী আমাদের রামু ডটকমকে জানান, ফার্মেসীগুলোতে এ ধরনের ভূয়া চিকিৎসক, মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
রশিদনগর ইউপি চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলম আমাদের রামু ডটকমকে জানান, শুনেছি আমার ইউনিয়নে এ ধরনের ভূয়া চিকিৎসক রয়েছে। প্রশাসন যেন এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। এতে আমার ইউনিয়নের মানুষই উপকৃত হবে।