আমাদের রামু প্রতিবেদক:
রামুতে হাজারো ভক্তের পদচারনায় রোববার থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সনাতন ধর্মীবলম্বীদের ঐতিহাসিক তীর্থস্থান রামু উপজেলার রামকুট তীর্থধামে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এ মেলা।
বাসন্তীদেবীর পূজা, মহতি ধর্মসভা, চব্বিশপ্রহরব্যাপী মহানামযজ্ঞ, রামনবমীব্রত, শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলা সনাতনী ভক্তের আগমনে পূণ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠবে রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের প্রাচীন পাহাড়ী অঞ্চল রামকুট।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, পিতৃসত্য পালন করতে ত্রেতাযুগে ভগবান শ্রীশ্রীরামচন্দ্র জটাবল্কল ধারণ করে ভার্যা সীতা ও অনুজ লক্ষ্মণসহ বনের ভরদ্বাজ মুনি আশ্রমে উপস্থিত হন। আশ্রমে ভরদ্বাজ মুনিসহ অনেক মুনি ঋষির সাথে দেখা হলেও অগস্ত্য মুনির সাথে রামের দেখা হয়না। রাম অগস্ত্য মুনির আশ্রমের পৌঁছলে, অতিথিকে মহাসমাদর তিনি। অগস্ত্য মুনি রামকে বিশ্বকর্মার তৈরী বৈষ্ণব ধনু ব্রহ্মাস্ত্র এবং অক্ষয় তুনীরদ্বয় প্রদান করেন। রামচন্দ্রকে অগস্ত্য মুনি পঞ্চবটী নামে একটি অতি সুন্দর বনের সন্ধান দেন। সে বনে সুন্দর ফলমূল, মিষ্টিজল, হরিণ-ময়ূর পাওয়া যায়। সুখে বসবাস করতে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতাকে নিয়ে দক্ষিণের পঞ্চবটীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যরে অশ্বথ, বিল্ব, বট, অশোক, আমলকি এই পঞ্চ বৃক্ষের পঞ্চবটী বনে কুটির নির্মাণ করে কালযাপন করেনত্রেতাযুগে ভগবান শ্রীশ্রীরামচন্দ্র।
সনাতন সম্প্রদায়ের মতে খ্রিষ্টপূর্ব ২৮০০ অব্দে শ্রীশ্রীরামচন্দ্র পঞ্চবটীবনে পৌঁছে ছিলেন। পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার ইতিহাস সমৃদ্ধ রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ পাড়ে গহীণ অরণ্যঘেরা শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের কিংবদন্তীর সেই কুটির বর্তমানে শ্রীশ্রীরামকুট তীর্থধাম।
শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের স্মৃতিকে ধারণ করে সেই পঞ্চবটীবন রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের শ্রীশ্রীরামকুট তীর্থধামে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবছর চৈত্র মাসে পাঁচ দিনব্যাপী রামচন্দ্রের জন্মোৎব উপলক্ষে শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলার আয়োজন করে। আজ রোববার (২ এপ্রিল) শ্রীশ্রী বাসন্তীদেবীর পূজা’র মাধ্যমে রামচন্দ্রের জন্মোৎব উদযাপন শুরু করা হবে। বিকালে ধর্মসভা আয়োজনের মধ্য দিয়ে রামকুট তীর্থধাম প্রাঙ্গনে শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ভোরে বিজয়াদশমী, মহানামযজ্ঞের পূর্ণাহুতি, মোহন্ত ও বৈষ্ণব বিদায়ের মধ্যে দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলা শেষ হবে বলে জানান, রামকুট তীর্থধাম পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি সুশান্ত পাল বাচ্চু।
তিনি জানান, পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বী হাজারো ভক্তের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠবে রামকুট তীর্থধামের মেলা প্রাঙ্গন। মেলায় প্রতিদিন নামসূধা পরিবেশন করবে, গোপালগঞ্জ’র নর-নারায়ণ সম্প্রদায়, চট্টগ্রামের সচ্চিদানন্দ সম্প্রদায়, স্বামী জগদানন্দ সম্প্রদায়, গোপাল বাড়ী, সিলেটের রাম-কানাই সম্প্রদায় ও জগন্নাথ সম্প্রদায়।
শ্রীশ্রী মহারামনবমী মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বদীপ শর্মা জানান, পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলায় ভক্তিমূলক গান, মহাপ্রসাদ বিতরণ, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নামসংকীর্তন, ধর্মসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতি বছর এ মেলা চলাকালে কক্সবাজার জেলা ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, সীতাকুন্ড, পটিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সনাতন ধর্মালম্বিরা ও ভারতের কলকাতা থেকে রামকুট তীর্থধাম দর্শনের জন্য পুণ্যার্থীরা ছুটে আসেন। তাঁরা প্রতিদিন রামকুট তীর্থধাম পুকুরে পূণ্যাস্নানে, বাসন্তী পূজা, শিবদর্শন, অহোরাত্র মহানামযজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরনে অংশ নেন। এ মেলায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের লোকজনও স্বতস্ফুর্ত ভাবে অংশ নেয়।
রামকুট তীর্থধাম পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ শিকদার জানান, রামকুট পূণ্যতীর্থের প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় সনাতন ধর্মালম্বীদের আনন্দমুখর শ্রীশ্রী মহান ধর্মাবতার শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের জন্মতিথি, বাসন্তী পূজা, নাম সংকীর্তন, মহোৎসব, শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলা। পুণ্য পাথেয় অর্জনের উদ্দেশ্য বহু দূর-দূরান্ত থেকে আসেন অজস্র নরনারী ধর্মপ্রাণ, ভক্তপ্রাণ। প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে এবং সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলায় পরিণত হয় রামু উপজেলা ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ অঞ্চলের রামকুট তীর্থধাম।
রোববার (২ এপ্রিল) বিকালে রামুর শ্রীশ্রীরামকুট তীর্থধামে শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, ১০ পদাতিক ডিভিশন রামু সেনা নিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান।
পাঁচ দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করবেন, কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাষ্টি অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন প্রধান আলোচক ও ময়মনসিংহ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ভক্তিপ্রদানন্দ মহারাজ প্রধান ধর্মীয় আলোচকের বক্তৃতা করবেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সদয় সম্মতিজ্ঞাপন করেছেন, রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. শাজাহান আলি, রামু থানা অফিসার ইনচার্জ প্রভাষ চন্দ্র ধর, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি জাফর আলম চৌধুরী, রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান, কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা, রামকুট তীর্থধাম পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীলিপ কুমার ধর, উপদেষ্টা মাষ্টার সুনিল শর্মা, সহ-সভাপতি ডা. আশুতোষ চক্রবর্তী মন্টু, রামু উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ আহ্বায়ক তপন মল্লিক প্রমুখ।
শ্রীশ্রী মহারামনবমী মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বদীপ শর্মা’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অজিত ধরের শুভেচ্ছা বক্তৃতায় অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করবেন, রামকুট তীর্থধাম পরিচালনা পরিষদের সাধারন সম্পাদক প্রকাশ শিকদার।
পাঁচ দিনব্যাপী শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন, রামকুট তীর্থধাম পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি সুশান্ত পাল বাচ্চু।