কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার আলোচিত ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশকে।
হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহেও খুনি শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার না হওয়ার প্রেক্ষাপটে শনিবার এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “হত্যাকাণ্ডের রহস্য দ্রুত উদঘাটনের জন্য মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “অনেকগুলো মোটিভ বের হয়েছে। রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে দিনরাত।”
দেশজুড়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে র্যাব কাজ করছে জানিয়ে বাহিনীর প্রধান বেনজীর আহমেদ ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, শিগগিরই রহস্যের জট খোলার আশা করছেন তারা।
র্যাব-১১ অধিনায়ক খোরশেদ আলম কুমিল্লায় সাংবাদিকদের জানান, মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর থেকে তনুর বাবা-মা, দুই ভাই ও চাচাত বোনকে শুক্রবার কুমিল্লায় র্যাব কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের পর তনুর পরিবারের সদস্যরা কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের অলিপুরে তাদের ভাড়া বাড়িতে ফেরত যান। তনুকে দাফন করতে মির্জাপুর গিয়েছিলেন তারা।
গত ২০ মার্চ রাতে অলিপুরেই তনুকে হত্যা করা হয়। খুনের আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা।
তনুর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন কোতয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলাটির তদন্তই এখন ডিবি করবে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী তনু কলেজ থিয়েটারে যুক্ত ছিলেন। তিনি টিউশনি করিয়ে ফেরার পথে খুন হন।
ইয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বাসা থেকে ২০০ গজ দূরের বাড়িতে ছাত্র পড়াতে যেতেন তনু। আর তনুর লাশ পাওয়া গিয়েছিল বাসা থেকে ১০০ গজ দূরে একটি কালভার্টের কাছে।
তিনি জানান, সেদিন রাত সোয়া ১০টায় দিকে বাসায় ফিরে শুনতে পানে যে তনু এখনও ফেরেনি।
“টর্চলাইট নিয়ে মেয়ের খোঁজে বের হই। কালভার্টের পাশে দেখি তনুর একটি জুতা। আমি চিৎকার দিয়ে উঠি। তখন ছোট ছেলে (আনোয়ার হোসেন রুবেল) বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। কিছু দূরে তনুর মোবাইল ফোনটা পড়ে থাকতে দেখি।
“একটু উঁচু জায়গায় জঙ্গলের মধ্যে তনুকে পেলাম। মাথার নিচটা থেঁতলে আছে। ওর মুখে রক্ত আর আঁচড়ের দাগ।”
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবদুর রব বলেন, “তনুর দেহে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।”
সেনানিবাসের মতো সুরক্ষিত এলাকায় এই তরুণীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো.হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, “আইএসপিআর থেকে বক্তব্য দিয়েছে, যে কোনো ধরনের সহযোগিতা লাগলে উনারা করবেন। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা মামলার রহস্য উদঘাটনে যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন।”
তনুর বাবা যে মামলা করেছেন, তাতে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
ইয়ার হোসেন বলেন, “আমি এখানে ৩১ বছর চাকরি করি। আট বছর ধরে কোয়ার্টারে থাকি। কারা ওকে মেরেছে, জানি না। আল্লাহ দেখেছেন। আমি হত্যাকারীদের কঠিন বিচার চাই।”
তনুর বড় ভাই নাজমুল হোসেন বলেন, তার বোনের ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হওয়ার। এজন্য এখন বিয়ে করতেও রাজি হয়নি সে।
তনুর খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে কুমিল্লায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শনিবার অব্যাহত ছিল।
বিকালে শহরের পূবালী চত্বরে ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও সংস্কৃতিকর্মীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম জীবন জানিয়েছেন, খুনি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
বিডিনিউজ