লাইফস্টাইল ডেস্ক:
মেডিটেশনের (ধ্যান) গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। শারীরিক বা মানসিক যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি আজকাল মেডিটেশনের সাহায্য নিচ্ছেন অনেকে। এ অবস্থা বিবেচনায় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটে এই সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হলেও বিভিন্ন মহলের বিরোধীতায় মেডিটেশনের ওপর ভ্যাট অব্যাহিত দেয়া হয়। এবারও প্রস্তাবিত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট অব্যাহতি প্রাপ্ত পণ্য ও সেবার দীর্ঘ তালিকার কোথাও মেডিটেশন সেবার নাম নেই। অর্থাৎ অবারো মেডিটেশন সেবার ওপর ভ্যাট আরোপের চেষ্টা চলছে।
অথচ এ বিষয়ে গত ২৭ মে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে বাজেট বিষয়ক আলাপচারিতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন মেডিটেশন সেবা বা ধ্যানচর্চার ওপর ভ্যাট থাকছে না। এটি থেকে খুব সামান্যই ভ্যাট পাওয়া যায়। এটি আগের মতোই থাকবে।
এর আগে ২০১৪ সালেরও বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, মেডিটেশন সেবা গ্রহণ করে হতাশাগ্রস্ত অনেক মানসিক ও শারীরিক ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ মুক্তির প্রয়াস পায়। এজন্য এ সেবার উপর প্রযোজ্য কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি।
এনবিআর সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে এসআরও জারির মাধ্যমে নির্দিষ্ট পণ্যে ভ্যাট মওকুফের সুযোগ থাকলেও নতুন আইনে তা থাকছে না। তবে নতুন আইনে চিকিৎসাসহ জনস্বাস্থ্য-সম্পর্কিত ব্যয়কেও ভ্যাটমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য ও সেবার দীর্ঘ তালিকার কোথাও মেডিটেশন সেবার নাম নেই!
গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও মেডিটেশন সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপুমনি, সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলিসহ বেশ কয়েকজন সাংসদ এর বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন এবং বিভিন্ন মহলের বিরোধীতায় বাজেটে মেডিটেশন সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহিত দেয়া হয়।
তারও আগে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী নিজেই মেডিটেশন সেবার ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করেন। সেবার বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, মেডিটেশন সেবা গ্রহণ করে হতাশাগ্রস্ত অনেক মানসিক ও শারীরিক বাধাগ্রস্ত মানুষ মুক্তির প্রয়াস পায় বলে সেই কারণে মেডিটেশন সেবার ওপর থেকে মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি।
২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রণয়ন করে উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা নীতিমালা। এতে বলা হয়, চিকিসকরা যেন স্ট্রেস-আক্রান্ত ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত যোগ, মেডিটেশন, শিথিলায়ন ও দম চর্চার পরামর্শ দেন।
দেশের অগ্রগণ্য চিকিসাবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে মেডিটেশন চর্চাকে উৎসাহিত করেছেন।
মরহুম জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, অস্থির-অশান্ত আধুনিক মানুষের জীবনে প্রশান্তির সুবাতাস আনতে পারে মেডিটেশন, যা পাশ্চাত্যে বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত। মরহুম জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান বলেন, মেডিটেশন চর্চা করে মানুষ নানা রকম রোগ থেকে মুক্ত হয়েছেন।
জাতীয় অধ্যাপক ও বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিসার পথিকৃৎ ব্রিগে. (অব.) ডা. আব্দুল মালিক বলেন, অপারেশন ও এনজিওপাস্টি হৃদরোগের কোন স্থায়ী সমাধান নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ডা. ডীন অরনিশ প্রমাণ করেছেন যে, সুস্থ জীবনযাপন, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম এবং মেডিটেশনের মাধ্যমে অনেক হৃদরোগী অপারেশন ও এনজিওপাস্টি ছাড়াই সুস্থ হয়েছেন।