ক্রীড়া ডেস্ক:
ভারতের কাছে হেরে শুরু করেছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এর পর সবাইকে চমকে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠল পাকিস্তান। স্বাগতিক ইংল্যান্ডকেও হারিয়ে দিয়ে কাটল ফাইনালের টিকিট, যেখানে অপেক্ষা করছিল তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। বিরাট কোহলির দলকে কোনও পাত্তা দিল না তারা। ব্যাট হাতে ফখর জামান, এর পর বোলিংয়ে মোহাম্মদ আমির। দুইজনের পারফরম্যান্সের কাছে হার মানতে হলো ভারতকে। ফখরের সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রান করা পাকিস্তান বোলিংয়েও দুর্দান্ত। ৬ রানে ২ উইকেট হারানো দলটি ৬ উইকেট হারায় ৭২ রানে, যার শুরুটা করেন আমির। ভারত ৩০.৩ ওভারে অলআউট হয় ১৫৮ রানে। ১৮০ রানে জিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হলো পাকিস্তান।
প্রথম ৬ উইকেট হারানোর পর দলকে বড় লজ্জা থেকে বাঁচাতে হার্দিক পান্ডিয়া নেমে রান প্রচণ্ড গতিতে বাড়ান। কিন্তু নিজের ভুলে রান আউট হতে হয় তাকে। ৪৩ বলে চারটি চার ও ছয়টি ছয়ে ৭৬ রান করেন পান্ডিয়া। পরের ওভারে জুনাইদ খানের শিকার রবীন্দ্র জাদেজা। একে একে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও জাশপ্রীত বুমরাহকেও আউট হতে হয়।
পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিংয়ের মুখোমুখি হয়ে শুরু থেকে বিপদে পড়ে ভারত। মোহাম্মদ আমির তাদের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দাঁড়াতে দেননি। এ বাঁহাতি পেসার তুলে নেন ভারতের প্রথম তিন উইকেট। ৩৩ রানের মধ্যে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ানকে সাজঘরে পাঠান আমির।
এর পর যুবরাজ সিং ও মহেন্দ্র সিং ধোনি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুজনই ফেরেন টানা ওভারে। ২২ রানে শাদাব খানের বলে এলবিডব্লিউ হন যুবরাজ। এ লেগব্রেকার তার তৃতীয় ওভারে তুলে নেন কেদার যাদবের (৯) উইকেট। এর মাঝে হাসান আলী ফেরান মহেন্দ্র সিং ধোনিকে (৪)। ইমাদ ওয়াসিমের হাতে ক্যাচ দেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
এর আগে ইনিংসের তৃতীয় বলে আমিরের এলবিডব্লিউর শিকার রোহিত। রানের খাতা না খুলে বিদায় নেন ভারতীয় ওপেনার। পাকিস্তানের ছুড়ে দেওয়া ৩৩৯ রানের লক্ষ্যে এটা ছিল ভারতের বড় হোঁচট। এখানেই শুরু। আমির তার দ্বিতীয় ওভারেই কোহলিকে বানান শাদাব খানের ক্যাচ। আগের বলেই জীবন পাওয়া ভারতীয় অধিনায়ক ৫ রানে আউট হন। নিজের পঞ্চম ওভারে ভারতের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ধাওয়ানকে ২২ রানে সরফরাজ আহমেদের ক্যাচ বানান আমির।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারত টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েও সুবিধা করতে পারেনি। পাকিস্তান তাদের ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখাল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে। ৪ উইকেটে তাদের স্কোর ৩৩৮ রান। ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে এটাই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। এর আগে শুরুতে ব্যাট করে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩২৯ রান করেছিল তারা।
আগে ব্যাট করতে নেমে ফখর জামানের সঙ্গে আজহার আলী ও মোহাম্মদ হাফিজের প্রশংসনীয় ব্যাটিং পাকিস্তানকে স্বস্তি এনে দেয়। তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান ফখর। আর হাফসেঞ্চুরি করেন আজহার ও হাফিজ। একটুর জন্য পঞ্চাশ ছোঁয়া হয়নি বাবর আজমের।
আজহার ও ফখরের ব্যাটিং নৈপুণ্যের পর বাবর রানের গতি ধরে রেখেছিলেন। হাফসেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি ছিলেন তিনি। কিন্তু কেদার যাদব তার দ্বিতীয় ওভারে বাবরকে ৪৬ রানে সাজঘরে পাঠান। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তান হারায় চতুর্থ উইকেট। এর পর দেখেশুনে খেলেছেন ইমাদ ওয়াসিম ও হাফিজ। ৭.৩ ওভারে তারা ৭১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। হাফিজ অপরাজিত ছিলেন ৫৭ রানে, ৩৭ বল খেলেন তিনি।
তবে সবচেয়ে বড় অবদান ফখরের। ৩ রানে ক্রিজ ছেড়েও ফিরেছিলেন তিনি। তার ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে গিয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির গ্লাভসে। নিশ্চিত আউট জেনে প্রায় মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন এ ওপেনার। কিন্তু আম্পায়াররা থামাল তাকে, রিভিউয়ে দেখা গেল বল করার সময় বোলিং লাইনের বাইরে পা রেখেছেন বুমরাহ। আম্পায়ার নো বলের সঙ্কেত দিলেন। জীবন পেলেন ফখর, আর ওই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন। টানা তৃতীয় হাফসেঞ্চুরিকে প্রথমবার তিন অঙ্কের ঘরে নিয়ে গেলেন। এর পর হলেন আউট। ততক্ষণে শক্ত অবস্থানে পাকিস্তান।
ভারতের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে দলকে ২০০ রান এনে দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন ফখর। এর পর বাবরের সঙ্গে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি শোয়েব মালিক, ১৬ বলে ১২ রান করেন তিনি।
মালিককে মাঠে জায়গা দেওয়ার আগে ৯২ বলে ১২ চার ও ২ ছয়ে প্রথম ওয়ানডে শতক পান ফখর। ১০৬ বলে ১১৪ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে রবীন্দ্র জাদেজার ক্যাচ হন তিনি। ১২ চারের সঙ্গে ৩টি ছয়ে সাজানো তার ইনিংস।
এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে ১২৮ রান করেন ফখর ও আজহার। তাদের ব্যাটিং নৈপুণ্যে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বেশ স্বস্তিতে ছিল পাকিস্তান। তবে নিজের ভুলের মাশুল দিয়ে আজহার ক্রিজ ছেড়ে চলে যান।
৬১ বলে হাফসেঞ্চুরি করা আজহার থেমেছেন ৫৯ রানে। ২৩তম ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শেষ বলে স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে একটি রান নিতে যান তিনি। কিন্তু স্কয়ার লেগে বুমরাহর হাতে বল দেখে অন্য দিক থেকে দৌড় দেননি ফখর। খুব সহজে মহেন্দ্র সিং ধোনি রানআউট করেন আজহারকে। ভাঙে শতাধিক রানের উদ্বোধনী জুটি।
রিপোর্ট বাংলা ট্রিবিউনের।